- এম. সাইফুল ইসলাম শাফলু : ইন্দারজানী পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়। সখীপুর উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে ঐতিহ্যবাহী কাকড়াজান ইউনিয়নের ইন্দারজানী বাজার ঘেঁষে দেশ স্বাধীনের পর পরই ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে ওই গ্রামের ধর্মপ্রাণ শিক্ষানুরাগী সমাজ সেবক বার বার নির্বাচিত কাকড়াজান ইউনিয়নের সফল চেয়ারম্যান শামসুল হক পান্না ওরফে গণসামসু ওই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেন। যিনি তাঁর নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের শিক্ষার আলোকে প্রসারিত করতে ৩ একর ২৫ শতাংশ জমির ওপর অক্লান্ত পরিশ্রম আর অর্থ ব্যয়ে এ বিদ্যাপীঠটি গড়ে তুলেন।
তাঁর সঙ্গে ওই গ্রামেরই মুন্তাজ আলী সরকার, হুসেন আলী সরকার, আবদুর রহমান, তায়েজ উদ্দিন মাস্টার, মফিজ উদ্দিন সরকার, আবু জাফর, আবুল হোসেন, মত্য়িার রহমান, দারগালী মিয়া, আবদুল্লাহ বেপারী, আবুল কাশেম এবং সিরাজুল ইসলাম ঠান্ডুসহ আরও অনেকে জমি ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন। মাত্র ৩৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ৫৪৮ জন শিক্ষার্থী ওই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিতে নিয়মিত অধ্যয়ন করছে। এদের মধ্যে ছাত্র রয়েছে ৩৪৩ জন এবং ছাত্রী ২০৫ জন। প্রথম বছরই ভাল ফলাফলে উপজেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নাম লিখান।
বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যারা সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন তাদের মধ্যে মৌলভী রিয়াজ উদ্দিন, আলহাজ্ব শরীফ উদ্দিন, আলহাজ্ব রফিক উদ্দিন, আলহাজ্ব মতিয়ার রহমান, আলহাজ্ব একাব্বর আলী, আলহাজ্ব চাঁন মাহমুদ তালুকদার, মো. ফজলুল হক, ডিএম শফিকুল ইসলাম লেবু, লোকমান হাকিম এবং ২০১৬ সাল থেকে অদ্যবধি মো. ইনছান আলী সভাপতি’র দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রধান শিক্ষক হিসেবে যারা ছিলেন তাদের মধ্যে মো. সিরাজুল ইসলাম ঠান্ডু, আবদুল খালেক, আবদুল হামিদ, মো. ইনছান আলী এবং মো. লুৎফর রহমান ২০১৫ সাল থেকে অদ্যবধি পর্যন্ত অত্যন্ত সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিদ্যালয় থেকে পাঠদান শেষে যারা দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন তাদের মধ্যে প্রকৌশলী কামরুন্নাহার, প্রকৌশলী তাসলিমা আক্তার সুমি, ডা. সোহান, রেজাউল ইসলাম , কৃষিবিদ অধ্যাপক শাহাদত হোসেন, সাংবাদিক হিসেবে ইসমাইল হোসেন, পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে মো. শাহজাহান মিয়া, মো. সিদ্দিকুর রহমান ,মো. রফিকুল ইসলাম, ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে মো. বাবুল হোসেন, সেনাবাহিনীতে ডা. শওকত আলী , নাজমুল হোসাইন, সমাজসেবা কর্মকর্তা হারুন আর রশিদ, সিনিয়র নার্স শামসুন্নাহার, ছাহেরা বেগম, নৌবাহিনীতে রুমা খান এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাকড়াজান ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম বিদ্যুতের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি ২০১৫ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক মনোনিত হন। আন্ত:স্কুল ফুটবল, ব্যাটমিন্টন ও ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় উপজেলা পর্যায়ে বেশ কয়েকবার সুনাম বয়ে আনে এ প্রতিষ্ঠান। রয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী দক্ষ স্কুল কেভিনেট। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভাল থাকায় দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কম্পিউটার শিক্ষক এখানে নিয়মিত মাল্টিমিডিয়া ক্লাশ ও শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল দেশ গড়ার লক্ষে হাতে কলমে কম্পিউটারের বিভিন্ন দিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। শরীরচর্চা শিক্ষাক এসেম্বলী ক্লাশ দিয়ে প্রতিদিন শুরু হয় পাঠদান কার্যক্রম। এখানে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের নিয়মিত তদারকিতে নিয়মত্রান্তিক ও যথাযথভাবে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় ।
বিদ্যালয়ের বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর রহমান বলেন, বর্ষায় মাঠে খেলাধুলা পরিচালনা করায় পুরো মাঠ কাদাযুক্ত হয়ে পড়ে। সীগ্রই বালি দিয়ে মাঠ স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। টিনের ঘরগুলো সংস্কার প্রয়োজন । ১তলা ভবনটি দ্বিতলা করা প্রয়োজন। এতে করে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিসংকট দূর হবে। ছেলে মেয়েদের পৃথক টয়লেট প্রয়োজন। শহর থেকে বেশ দূরে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠায় এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য কম্পিউটার ল্যাব প্রয়োজন। সাথে বাজার থাকায় ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য বিদ্যালয়ের চারপাশে সীমানা প্রাচীর প্রয়োজন বলেও তিনি জোর দাবি জানান।