35 C
Dhaka
Tuesday, July 23, 2024

সখীপুর পৌরসভার বাজেট ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুর পৌরসভার ২০২৪-২৫ অর্থ...

সখীপুর পৌরসভার প্রাক বাজেট ঘোষণা 

নিজস্ব প্রতিবেদক: সখীপুর পৌরসভার প্রাক বাজেট ঘোষণা...

সখীপুরে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধকরণ সভা অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুরে সর্বজনীন পেনশন স্কিম...

আমাদের ছোটবেলা: বর্তমান বাস্তবতা

অন্যান্যআমাদের ছোটবেলা: বর্তমান বাস্তবতা

সাইফুল ইসলাম সানি: আমাদের ছোটবেলার সঙ্গে পল্লী অঞ্চলের রয়েছে এক আত্মার আত্মীয়তা। ছোটবেলার স্মৃতি মধুর, আনন্দের, কখনো কখনো কষ্টের। তার চেয়েও উল্লেখযোগ্য হলো ছোটবেলার স্মৃতি অবিস্মরণীয় এবং স্মৃতিতে আজও অম্লান। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠা। পাশের বাঁশ ঝাড়ে ডাহুক পাখির ডাক। ভোর হতে এখনো অনেক দেরি। মনে একটাই চিন্তা, কখন ভোর হবে! ওইতো মসজিদের মাইকে হেলাল হুজুরের আজানের আওয়াজ ভেসে আসছে। বিছানা থেকে লাফ দিয়ে ওঠে দৌড়ে চলে যেতাম বড় খেজুর গাছটার নিচে। পাকা খেজুরগুলো পাছে কেউ আমার আগেই কুঁড়িয়ে না নিয়ে যায়! বর্ষা মাসের সকালগুলো ছিলো সবচেয়ে আনন্দের। বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টি গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলত। আষাঢ়ে বৃষ্টির সঙ্গে ছিল আমাদের গভীর এক মিত্রতা। বৃষ্টি মানে মায়ের শাসন বড় গলায়, বৃষ্টি মানে অবাধ্য হয়ে ফুটবল খেলায়। বৃষ্টি মানে প্রবল ঝড়ে আম কুড়োনো, ঘরে বসে বন্ধুরা সব হানড্রেড খেলে দিন ফুরোনো। সারাদিন ধোয়ারি (মাছ ধরার যন্ত্র) দিয়ে মাছ ধরা। সন্ধ্যায় ধান ক্ষেতের আইলে ধোয়ারিগুলো পেতে রাখতাম, সকাল হওয়ার আগেই খুব আনন্দে ধোয়ারিগুলো তুলে দেখতাম- বড় একটা সাপ ধোয়ারির ভেতর আটকে আছে। বাঁচার জন্য ছটফট করছে। সবচেয়ে খারাপ লাগতো শরীরের কাদা ধুয়ে স্কুলে যাওয়ার সময়। স্কুল সব সময় একটা জামেলার বিষয়ই মনে হতো। মাস্টার পড়া ধরবে, না পারলে বেত্রাঘাত কানমলা দিবে এসব মেনে নিতে পারতাম না। স্কুলে না গেলে বড় বোনটার বকুনি আরো বেশি খারাপ লাগতো। বাবাকে দেখেছি সকাল-সন্ধ্যা জায়নামাযে আর সারাদিন ক্ষেত-খামারে। তাঁর ছেলের হাতে কলম খাতা? মানতে কষ্টই হতো। তাই স্কুলে যাওয়ার নাম করে কাঁশবনে বই লুকিয়ে রেখে মারবেল খেলা। কোমরে লুকিয়ে রাখা বাটল আর মাটির গুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি ঘুঘু শিকারে। মায়ের মাটির ব্যাংক থেকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করা টাকা দিয়ে কালিদাস বাজারের চৈত্রপূজা থেকে চাকু কেনা। রাস্তার পাশের টক-মিষ্টি আমগুলো ঢিলছুড়ে পেরে খেয়েছি, বনের পাশের জাম গাছটার জামগুলো দুষ্টুরা সব দলবেঁধে সাবাড় করেছি। এতো কিছুর পরও প্রিয় শিক্ষক ক্বারী গোলাম মোস্তফার আদর আর বেত্রাঘাতের মিশ্র প্রভাবে বই আর কলমটাকে ছাড়তে পারিনি। যখন মাস্টার্সে পড়ি; তখনো অর্থনীতির ক্যালকুলাসগুলো খুবই বিরক্তিকর লাগতো, মাঝেমধ্যে অবসাধও গ্রাস করতো। তবুও পরিবারের প্রবল আশা আর কয়েকটি পরীক্ষার সম্মানমার্কা পাশ বাধ্য করেছে কলম খাতাটাকে ধরে রাখতে। আমরা দুরন্ত ছিলাম ঠিকই; তবুও যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকেই একটা রুটিন মাফিক চলতাম। বাবা বলতেন সকালের নির্মল হাওয়া শরীরের জন্যে ভালো। তাই শালিক ডাকা ভোরে নিমের মেসওয়াক চিবুতে চিবুতে রাস্তায় ৩০মিনিট হাটাহাটি করতাম। বাড়ি ফিরে একঘন্টা লেখাপড়া তারপর স্কুল। স্কুল ছুটি হতো দুপুর দুইটায়। কিন্তু মাঝেমধ্যে দলবেঁধে মাস্টার মশাইকে বলে আমরা একটার সময়ই চলে আসতাম। শীতকালে গোল্লাছুট, ছিছাই, লবণদাড় খেলা। গ্রীষ্মকালে গোসলের সময় বাড়ির পাশের পুকুরে লাফিয়ে শরীরের সব কান্তি দূর করতাম। ঘন্টাব্যাপী লাফলাফি, হুউরা খেলা, পানি ছুড়াছুড়ি। কর্দমাক্ত মাঠে ফুটবল খেলে সন্ধ্যায় পুকুরে গোসল করে বাড়ি ফিরে আবার পড়তে বসা। রাতে একা চলতে চলতে যখন পার্শ্ববর্তী শালগজারির বন থেকে মরমর শব্দ ভেসে আসতো তখন গা শিউরে উঠত। একটি হিমেল হাওয়া যেনো বয়ে যেতো সমস্ত শরীরে। ভয়ে শরীরের রক্ত যেন জমাট বাঁধবে, তখন একঝাঁক জোনাকি সোনালি বাতি জ্বালিয়ে পাশ দিয়ে উড়ে যেতো, মনে হতো রাস্তায় আমি একা নই। ছোটবেলায় আমরা জিন-ভূত ছাড়া মানুষরূপী হায়েনাদের ভয় পেতাম না। কারণ তখন খুব কম ঘটনাই ছিলো যেখানে মানুষ হায়েনা রূপে আবির্ভূত হতো।
ছোটবেলার এ স্মৃতিগুলো তখনই মনে পড়ে যখন দেখি আমাদের সেই গোসলের পুকুর এখন মাছের খামার, সেই আড্ডা দেওয়ার জায়গায় এখন বড় অট্রালিকা যেখানে জুয়ার আসর মদের দোকান। সেই খেলার মাঠটি এখন অনাদরে ফাঁকা পড়ে থাকে অযত্নে অবহেলায়। কষ্ট তখনই লাগে যখন চোখে পড়ে- আমরা যেখানে স্কুল পালিয়ে মারবেল খেলেছি, এখন সেখানে স্কুলের ছেলেরা সিগারেট টানে, ইয়াবার মার্বেল খেয়ে নিজের ও পরিবারের জীবন অতিষ্ট করে তুলে! আমরা যে সময় সাইকেলের টিউব দিয়ে বাটল বানিয়ে ঘুঘু শিকার করেছি, সেখানে এখন পিস্তল দিয়ে মানুষ শিকার করে। আমরা যে চাকু দিয়ে আম ছুলিয়ে খেয়েছি, এখন সেই চাকু দিয়েই মানুষের গলা কাটা হয়। আমরা যে শিক্ষকের সম্মানে তাঁর সামনে হাটতে সাহস করিনি, এখন সেই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরিবর্তনতো হওয়ারই কথা ছিলো, সেতো অর্থনৈতিক পরিবর্তন, সামগ্রিক সামাজিক উন্নয়ন। তাই বলে এমন পরিবর্তন! নীতি নৈতিকতার অধ:পতন?
ছোটবেলায় একটা বাইসাইকেল কেনার বড় শখ ছিলো। বাতাসের ঘুর্ণীপাকে সৃষ্টি হওয়া বাউকুরানীতে শুকনো মর্মর গজারী পাতাগুলো দিকবিদিক ছুটে যাচ্ছে। সেই পাতাগুলো চোখ বন্ধ করে ধরে নিয়ে বালিশের নিচে রেখে কত স্বপ্ন বুনেছি- সকাল হলেই পাতাগুলো টাকা হবে! আমার টাকার অভাব দূর হবে। এখান থেকে ভিক্ষুক বুড়ি মাকে দশ টাকা দিবো, বাকী টাকায় একটা সাইকেল কিনবো। যদিও এভাবে টাকা পাওয়ার প্রত্যাশাগুলো অবাস্তব ছিলো। তবুও স্বপ্নগুলো প্রত্যাশাগুলো তো স্বচ্ছ ছিলো। আর এখনতো ছেলেরা স্বপ্ন দেখতে ভুলেই গেছে। মা-বাবার কাছে তাদের দাবি- মোবাইল আর মোটরসাইকেল কিনে দাও। না দিলে ফাঁসি দেবো, বিষ খাবো, ঘুমের ট্যাবলেট খাবো, মরে যাবো।
সবার জীবনেই কিছু স্মৃতি থাকে, যা মনে করে মানুষ কাঁদে আবার কিছু স্মৃতি মানুষকে হাসায়। তেমনি আমাদের স্মৃতিতে আজও অমলিন হয়ে আছে ছোটবেলা। এই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে খুব আফসোস হয়। মন চায় সবাইকে নিয়ে চলে যেতে সেই ছোটবেলায়। যেখানে ছিলোনা কোনো না পাওয়ার বেদনা, ছিলোনা হতাশা। শুধু ছিলো প্রতিদিন নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা। শৈশব মনে হলেই ছোটবেলা তার রূপসজ্জা গন্ধ সুবাস সব নিয়ে ধুপের মত নির্ভার অস্তিত্বে মেঘের মত ভাসতে থাকে, আর ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। কিন্তু ছোটবেলার সব মুখ তো মনে পড়েনা! কাকে নিয়ে যাবো আমাদের সেই স্মৃতিময় ছোটবেলায়?

-লেখক: সাংবাদিক, দৈনিক বাংলাদেশের খবর  ও বার্তা সম্পাদক, সাপ্তাহিক সখীপুর বার্তা।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles