প্রফেসর আলীম মাহমুদ
ঈদের গান
ধনী-গরিব এক সমানের ঈদ আইলো রে
ছোট-বড়ো মূর্খ-জ্ঞানী
এক আসনে সবাই বসার ঈদ আইলো রে
আইলো মহা ঈদ আইলো রে
আইলো রোজার ঈদ আইলো রে ॥
বারো মাসে সিয়ামের মাস মাহে রমাদান
মানব জাতির জন্যে মওলা ঘোষিলেন ফরমান
ঈমান-একিন ঠিক রাখিয়া
আদেশ-পালন শেষ করিয়া
মোমিন, ঈদ উপহার, পাইলো রে ॥
বাতাস যেমন পঁসে রয়না খালি কোনাকানি
তেমনি সারা বিশ্বে ছড়ায় ঈদ আনন্দের বাণী।
সুযোগ আইলো আত্মশুদ্ধির ছাড়ি অহংকার
এক আকাশের নিচে সবাই সমান যে ¯্রষ্টার
দুঃখ ও সুখ ভাগ করিয়া
সহায়হীনের হাত ধরিয়া
দেখো মানুষ মহৎ হইলো রে ॥
মোসলিমা খাতুন
মানবিকতা
কারি পাতার ঘ্রাণ আর
করম্চা ফুলের সৌরভে
দোল খায় বুকের জমিন
মুগ্ধ মানবিক চোখ
ঘন সবুজের আবাহন বৃক্ষলতায়
ঝোপের আড়ালে নড়েচড়ে বসে
ডিমে তা দেয়া ঘুঘু পাখিটি
হঠাৎই তীরন্দাজের লক্ষ্যভ্রষ্ট তীর
ছুটে এসে বিঁধে আমার বুকে
আল্লাহকে অনুনয় করে বলি-
হে আল্লাহ ঘুঘুটির দীর্ঘায়ূ দাও!
খান মোহাম্মদ খালেদ
কান নিয়েছে চিলে
কান নিয়েছে চিলে
এই কথাটি শুনে আবুল
চোট পেয়ে খুব দিলে
কানের খবর না নিয়ে সে
ছুটলো চিলের পিছে,
এদিক ওদিক সারাটা দিন
ঘোরাই হলো মিছে।
চিল পেলো না খুঁজে
কী করা যায়, কী করা যায়
ভাবছে দু’চোখ বুজে
এমন সময় একটা মশা
কানের আশে পাশে
গুনগুনীয়ে গান ধরাতে
হুঁশ আবুলের আসে।
মারতে মশা জোরে
নিজের কানেই পেলো ব্যথা
আপন হাতের চড়ে।
হাত বুলিয়ে দেখলো আছে
কান দু’টো তার ঠিকই
এবার আবুল ভাবলো, এতে
ভুল হয়েছে কী কী ?
ভেবেই মরে লাজে
বোকার মত কাজটা এমন
তার করা কি সাজে!
গুজব শুনে তার পিছনে
এমন করে ছোটা
তাদের বেলায় পায় তা’ শোভা
বুদ্ধি যাদের মোটা।
শাকিল আনোয়ার
ঈদ আনন্দ
ঈদ মানে
খোঁপায় ফুল
কানে দুল
আব্বুর কাছে
আম্মুর কাছে
বায়নাতে নেই ভুল।
ঈদ মানে
পায়ে আলতা
হাতে চুড়ি
খুকুর পোশাক রঙবাহারী
সারাটা দিন ঘুরাঘুরি
সবার সঙ্গে লুকোচুরি
মুখে হাসির ফুল।
ঈদ মানে
খুশির ভাগ
ভালোবাসা প্রেম সোহাগ
হাসি মাখা ঈদের দিন
আসতো যদি প্রতিদিন
আহা! আসতো যদি প্রতিদিন…
আবেদীন জনী
গাঙচিল সুখ
একটি কবিতা প্রতিদিন ছন্দ ও রোদ্দুর মেখে দেয় শরীরে ও মনে
বুনে যায় অহর্নিশ মুগ্ধতার স্বপ্নজাল
কবিতাটির বুকে আছে নদীর জলের শব্দ-সুর, পাখিদের কিচির মিচির
নরোম হাওয়াদের ছন্দময় ছুটে চলা
ঘাসফুল প্রজাপতি আর ফড়িংয়ের মতো রূপডানা তার
হৃদয় উঠোনে হয় গোলাপের চাষ
যেখানেই যাই, যত দূরে
মনে পড়ে সেই কবিতার মুখ
বুকজুড়ে তার গাঙচিল সুখ।
আনিসুর রহমান খান
মঙ্গলকাব্য
আকাশের দিকে চেয়ে থাকি
দু’একটি বিচ্ছিন্ন কাক উড়ে যায়;
মসৃণ ধূলোর শরীরে –
নম্র নারীর দু’খানি কোমল পায়ের ছাপ।
আশ্চর্য এক স্বপ্নঘোর থেকে –
আমার চৈতন্য ফিরে এলে দেখি
শ্রাবণ আকাশ মেঘময়।
কৃষকের উৎফুল্ল হৃদয়ে প্রেমের তুফান
সৃষ্টির সম্ভাবনায় পৃথিবী ক্রমেই গর্ভবতী হয়।
দূর দিগন্ত থেকে ফিরে আসে এ্যালবাটস এক
আশির্বাদ আশির্বাদ ধ্বনি তুলে।
রুদ্র হাসান খান
ভাল হতো
যেখানে যেমন ছিলে সেভাবে থাকলে ভাল হতো
ভাল হতো দেখা না হলেই
এতোটা বছর পর দখিনা হাওয়া বিলোড়িত করে
মন আঙিনার সবুজ ঘাসে কেন নাড়া দিলে
পরিপাটি পাতাগুলো ঝরালে পথের ধুলোয়
বর্ণিল আকাশ ঢেকে দিলে কালো মেঘে
উড়ে আসা বাক্যগুলো রক্তচোষা মাকড়শার মত
কুরে কুরে খায় ভেতর বাহির একান্ত আমার
অস্তগামী সূর্যের নুয়ে পরা আলোয় নিজেকে ভেজালে
কেড়ে নিলে ভোরের আলোয় ফুটে ওঠা সোনালী সকাল
তার চেয়ে ভাল হতো পোড়াতে যদি আমার কঙ্কাল।
গালিব মোল্লা জাকির
এক নাগরিক আমি
স্বপ্নে বাজে দূরের কথা
বুকের কথা তুমি,
জীবন নগর ঘুরে দেখি
এক নাগরিক আমি ।
আমি আকাশ আমি বাতাস
তার ভিতরে তুমি,
তুমি তুমি রসে রসে
মাটির প্রদীপ জ্বালি।
হংস হয়ে জলের ভিতর
ডুব দিয়ে পাই তুমি,
তোমার ভিতর ঢেউ খেলে যায়
ঢেঊ হয়ে যাই আমি।
অরণ্য ইমতিয়াজ
লাল-সবুজের জয়
বাণিজ্যের ঝা-া উড়িয়ে
শাসনের লালসা নিয়ে
আসে লাল ক্রসের বৃটিশসেনা
লুটেপুটে খেয়ে অবশেষে
যখন ষাঁড়ের সামনে লাল নিশান উড়ে
বাধ্য হয়ে লেজ গোটায় তারা।
পাকসেনা নামে ‘নাপাকি’র দল
আসে শোষণের হাত ধরে
শয়তান তাদের মাথায় বসে
খ্যাপা নাচন নাচে!
কৃষকের বুকের রক্ত নিয়ে পশ্চিমাকাশের নিচে
গড়ে উঠে প্রাসাদ।
যখন আকাশ-বাতাস মুখরিত করে
গর্জে উঠেÑ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’
সাহসে সাহস মিলে, তরুণের হাতে হাতিয়ার উঠে
পথ-ঘাট-মাঠ পেরিয়ে
সবুজ ঘাস বুকে জমে লাল হয়ে
ঠিক তখনই
নির্লজ্জের রেকর্ড ভেঙে
খুবলে নেয় রক্তজবাÑ
শিয়াল শকূন আর হায়েনার দল।
ছোবলে ছোবলে ক্ষত-বিক্ষত মানচিত্র তবু
অবশেষে হাসে ব্যথায়-যাতনায় কেঁদেও
জয় লাল-সবুজেরই হয়।
তুহিন সিদ্দিকী
হায়রে সময়!
হায়রে সময়!
তুই যে আর ফুরিয়ে যাওয়ার
সময় পেলি না।
কখন যে কিভাবে এমন হলো
জীবনের সব দেখি এলোমেলো,
হঠাৎ করেই খবর এলো
অস্থির নয়, স্থির হও
একটু পরেই শুনতে পাবে
নির্মম বিচ্ছেদের বাজনা।
অভিযোগ নয় কথা শুনো
ভীষণ অস্থির আমার মনও
ভাবছি শুধু একটি কথাই
আসলে আমি যাচ্ছি কোথায়
তবে কি হঠাৎ উপসংহার অযথাই?
সময় শেষ বেজে উঠলো ঘন্টা
চুপ, একদম চুপ…
অগুছালো জীবন রইলো পড়ে
হায়রে মন!
স্বপ্নেও তুই এই জীবনে
সুখের নাগাল পেলি না।
হায়রে সময়!
তুই যে আর ফুরিয়ে যাওয়ার
সময় পেলি না।
আলীম মাহমুদ জুনিয়র
তুমি কি এমনই
আচ্ছা! তুমি কি এমনই?
শ্বেত হৃদ ক্যানভাসে রঙমাখা তুলিতে-
তোমার ছবি আঁকতে গেলাম
নীল আর সাদা রঙের কষ্টাগুলো
অবিরাম ঝড়তে লাগলো।
ভাবলাম !
এটা বোধহয় তোমাকে রাখার
সঠিক জায়গা হয়নি;
নরম জায়গায় কঠিনের প্রস্থিাপন
ব্যকরণে শুদ্ধ হয়নি।
তাই হয়তো হৃদতন্ত্রী ছিড়ে
রক্তপাত হচ্ছে; নয়তো-
ধারণ করার ক্ষমতাই নেই।
ভাবনা; আর ভাবনা;
অত:পর ঠিক করলাম,
কঠিন পদার্থে আঁকবো তোমার ছবি
তাই বরফকেই বেছে নিলাম।
তুলির আঁচড় দিলাম;
তোমার মুখের অবয়ব বুঝতে পেরেই
গোলাপী, বেগুনী, আর লাল রঙের
কান্না জুড়ে দিলো।
সবচেয়ে কঠিন পদার্থও
তোমাকে বুকে ধরতে ভয় পায়।
আচ্ছা! তুমি কি এমনই?
মোজাম্মেল হক সজল
স্ত্রৈণ পুরুষ
কেউ আমাকে স্ত্রৈণ বলে বলোক
আমি তার প্রাপ্য প্রশংসা করবোই ।
অতীত ও আগামীর স্বপ্ন কিংবা দু:স¦প্ন
প্রত্যাশার সোনালী রোদ, রৌদ্দ্রজ্জ্বোল ভালোবাসা
নিষ্পাপ প্রেমের ¯্রােত ধারা যে স্ত্রী
আমি তার প্রাপ্য প্রশংসা করবোই ।
বসন্তের বিকেল, চন্দ্র, সূর্য ও নক্ষত্রমালা
পাহাড়, নদী, সাগর কিংবা অরণ্য
অবিরাম মেলে ধরে যে স্ত্রীর চোখ
আমি তার প্রাপ্য প্রশংসা করবোই ।
কেউ আমাকে স্ত্রৈণ বলে বলোক
আমি তার প্রাপ্য প্রশংসা করবোই ।
এম সাইফুল ইসলাম শাফলু
হারিয়েছি
সময় অতিক্রম করেছি অনেক
হারিয়েছি জীবনের উত্তাল দিন
শত ¯িœগ্ধ সকাল হারিয়েছি
হারিয়েছি রাত জাগা নির্ঘুম রাত
মায়াময় মনোরম বিকেল হারিয়েছি
হারিয়েছি জোনাকী সন্ধ্যা
বন্ধু ,আপনজন হারিয়েছি অনেক
হারিয়েছি জীবনের সোনালী দিন
চেনা-অচেনা লোক হারিয়েছি
হারিয়েছি অতীত স্মৃতি
পথ হারিয়ে পথিক হয়েছি
বিবেক হারিয়ে বিবেকহীন
মান অভিমান তাও হারিয়েছি
সবুজে ঘেরা গ্রাম হারিয়েছি
রাজনীতিতে সততা হারিয়েছি
আদর ¯েœহ সোহাগ হারিয়েছি
মাঝি মাল্লার গান হারিয়েছি
বিচারকের বিচার হারিয়েছি
শাষকের শাসন হারিয়েছি
ফল ফলাদির স্বাধ হারিয়েছি
পিতা-পুত্রের সমতা হারিয়েছি
মা মেয়ের একতাও হারিয়েছি
ভাললাগা-ভালবাসা হারিয়েছি
হারিয়েছি কষ্ট গ্লানি
খামখেয়ালি মন হারিয়েছি
আমার আমি সব হারিয়েছি
হারিয়ে হারিয়ে সব হারিয়েছি
মিটেনি চাওয়া-পাওয়া ।
নূরুল ইসলাম নাফিজ
খোকার ঈদ
খোকা যাবে ঈদের মাঠে
ঈদের নামায পড়বে,
নামায শেষে সবার সাথে
কোলাকোলি করবে।
গরীব-দু:খী সাথে নিয়ে
সেমাই পায়েশ খাবে,
মনের সকল কষ্ট ভুলে
দারুণ খুশি হবে।
পরান জহির
ঈদুল ফিতর
আত্মশুদ্ধির সাধনাতে মগ্ন রোজাদার
আল্লাহ্ শাফী আল্লাহ্ মাফী পরোয়ার দিগার
দ্বীনের পথে মুমিন পেল সর্বশ্রেষ্ঠ মাস
এ মাসের উছিলায় যেন কু-রিপু হয় নাশ
ছোট বড় ধনী গরিব মত্ত সাধনায়
পূণ্য যেন থাকে লেখা আমলের খাতায়
শবে বরাত শবে কদর হৃদয়ের মঞ্জিল
রমজান মাসেই শ্রেষ্ঠ কিতাব কুরআন হল নাজিল
গত হল ত্রিশ রোজা এল ঈদুল ফিতর
আজ আনন্দের ঢেউ খেলে যায় হৃদয়ের ভিতর
আজ ভেদাভেদ থাকবেনারে করব কোলা-কুলি
সাম্য মেত্রীর ছবি আঁকবে প্রেমের রং তুলি
রাজা প্রজায় মিলন হবে মিলবে মুসলমান
খাদ্য পাবে জামা পাবে গরিবের সন্তান
মানবে সবাই আপন মতে আসমানি তাগিদ
হৃদয় মাঝে প্রেম ঢেলে দিক আজকে খুশির ঈদ।
সাইফুল ইসলাম
প্রাণের সখীপুর
শোন ভাই শোন
সখিপুর আমার
সখিপুর তোমার
সখিপুর সবার।
সখিপুর আমার
শত জনমের অহংকার,
সখিপুর আমার
শত আশা আকাক্সক্ষার।
সখিপুর আমার
ধুলো মাখা লাল মাটির,
সখিপুর আমার
৭১’এ কাদেরিয়া বাহিনীর ঘাটি।
এই সখিপুরেই রয়েছি
আমরা দামাল ছেলেরা
সখিপুরের অমঙ্গল করবো না
আমরা উন্নয়ন ছাড়া।
এই সখিপুরেই রয়েছে
হাজারো জ্ঞানী গুণীর বাস
আমরা গর্বিত তাই-
এই আনন্দ উচ্ছ্বাস।