মো. আমিনুর রহমান:
ইতোমধ্যে বিশ্বে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৭১,০০০। আজকে শুধু আক্রান্ত হয়েছে ৪৮,০০০ এর কিছু বেশি; আর মৃত্যুবরণ করেছে ২,৯৫০ জন ((যদিও এখন পর্যন্ত সর্বমোট মৃত্যুবরণ করেছে ৩৭,০০০)। প্রতিটি মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে গতকাল নতুন করে ১জন আক্রান্ত হয়ে সর্বমোট করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৯ এ।
কেনই বা এই তথ্য উপস্থাপন করলাম!!!
লেখার অবশ্যই ন্যায়সঙ্গত কারণ আছে। হয়ত কিছুক্ষণ পর বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। মহাশক্তিধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালীতে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ১,৫৬,০০০ এবং ১,০২,০০০। এই দুই রাষ্ট্র করোনাকে ঠিক মতো বুঝতে পারে নাই। যখন এই দুই রাষ্ট্র লকডাউন কর্মসূচি গ্রহণ করে, সে সময়কার নাগরিকগণ করোনার তীব্রতা অনুধাবন না করে ঢিলে-ঢালাভাবে social-distancing করে। যার দরুণ দ্রুত করোনার বিস্তার ঘটে।
ইতালীর চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত থাকার পরও সেখানে ৩৩০ জন ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে নিজেরাই করোনায় আক্রান্ত হয়। সেখানে ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ভেঙ্গে গিয়েছে। ডাক্তারগণ আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন কিন্ত তারপরও মৃত্যু আটকাতে পারছেন না। যদিও পৃথিবীতে জাপানের পর ইতালীতে গড় বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি এবং মারা যাচ্ছেন বয়স্ক মানুষই ( মৃত ব্যক্তিদের গড় বয়স ৭৮ বছর)।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিউইয়র্কে আক্রান্তের সংখ্যা। এখানে অভিবাসী লোকও বেশি বসবাস করে। লকডাউনে সঠিকভাবে পালন না করার মাসুল গুনতে হচ্ছে। সেখানে চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেশন পাওয়া যাচ্ছে। কারণ ১জন ব্যক্তিকে ভেন্টিলেশন সুবিধা দিতে হচ্ছে প্রায় ৫-৭ দিন পর্যন্ত। ফলে নাগরিকরা পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা সেখানে পাচ্ছে না। এপ্রিল মাসের ১০ তারিখের দিকে ট্রাম্প প্রশাসন লকডাউন অবমুক্ত করতে চেয়েছিল; অবস্থার অবনতি দেখে পুরো এপ্রিল মাস লকডাউন করবে। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে, জুন মাস নাগাদ করোনার প্রকোপ কমবে।
এখন আমাদের বাংলাদেশ প্রসঙ্গে….
ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ। চীন, WHO সহ অনেকে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে। যদি social-distancing, পরিচ্ছন্নতা আর হোম কোয়ারেন্টিন সঠিকভাবে না হয়; তাহলে ইতালী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হবে। আমাদের দেশে ইতালী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। আর এদেশের মানুষের যে সংখ্যা; যদি একবার ভয়াবহ আক্রান্ত হয়, চিকিৎসাহীনভাবেই অধিকাংশ মানুষ মারা যাবে।
বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে কয়েকটি কাজ করতে হবে:
১। লকডাউন করা অবস্থায় ঘরে বা বাসায় অবস্থান করা; (অযথা ঘোরাফেরা না করা)
২। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে থাকা;
৩। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা; (কেননা করোনা সাংঘাতিক ধরণের ছোঁয়াছে)
৪। সরকারের আদেশ মেনে চলা; (প্রশাসনকে মেনে চলা)
৫। চিকিৎসকদের চিকিৎসার সামগ্রী নিশ্চিত করা;
৬। হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা এবং
৭। করোনার উপসর্গ থাকলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা ও সত্য ঘটনা খুলে বলা।
বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে crucial stage পার করছি। জাপানের মত আমাদের দেশের জনগণ যদি অযথা না ঘুরে ঘরেই অবস্থান নিশ্চিত করে, তাহলে আমাদেরকে ইতালী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত বেকায়দা অবস্থার সৃষ্টি হবে না। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের জনগণ তা প্রমাণ করবে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও চিকিৎসকগণ যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন।
জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরাও এগিয়ে আসছে। তাঁদের আসছে স্বতফূর্তভাবে ও শর্তহীনভাবে। ভারতের আজিম প্রেমজি ৫০,০০০ কোটি রূপি, টাটার ১,০০০ কোটি রূপি, অক্ষয় কুমার ২৫ কোটি রূপি সরকারি ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছে। ঠিক বাংলাদেশে বৃহৎ না হলেও স্বল্প পরিসরে আসছে আসছে। প্রশাসন ক্যাডার এসোসিয়েশন বৈশাখী ভাতা ও সেনাবাহিনী ১ দিনের বেতনের টাকা ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছে। এছাড়া অনেক এসোসিয়েশন, ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায়, দু:স্থ, গরীব ও দিনমজুরদের খাবার সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরা তাঁদের কার্যক্রমকে সাধুবাদ ও স্যালুট জানাই। সরকার তাঁর নিজস্ব ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যাতে কোন অসহায়, দিনমজুর না খেয়ে থাকে। আমাদের এ সময় চুরি, ডাকাতি, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধ হ্রাস পেয়েছে। করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও সম্প্রতি নেদারল্যান্ড এর জাদুঘর হতে ভিনসেন্ট ভ্যানগগের স্প্রিং গার্ডেন নামে একটি চিত্রকর্ম চুরি হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এরকম কোন কার্যক্রম ঘটে নাই।
অজানা ভয় ও আশঙ্কার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কায় ইতোমধ্যে মার্কিন, মালয়শিয়া, ভুটান ও বৃটেনের কূটনীতিক ও নাগরিকগন তাঁদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ত্যাগ করেছে। এখন পর্যন্ত কোন ঔষধ আবিষ্কার হয় নাই। ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে ধাক্কা আসবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।
কিন্ত বর্তমান পরিস্থিতিতে সুস্থভাবে টিকে থাকাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
তাই বিনীত অনুরোধ
সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী
stay home; social distancing
-লেখক: মো. আমিনুর রহমান (সিনিয়র সহকারী সচিব), সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সখীপুর, টাঙ্গাইল।
[লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]
-এসবি/সানি