কয়েক বছর আগে কোন এক শুক্রবারে নিকটাত্মীয়ের জানাযায় শরীক হবো বলে রওনা হলাম। জুমা’র পরই জানাযা হবে বলে গন্তব্যস্থলে গিয়ে জুমা’র নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম। জাস্ট ১:২৫ মিনিটে গিয়ে দেখি সবাই সুন্নত আদায় করছে। ভাবলাম ফরজের আগের সুন্নত হয়তো কিন্তু জিজ্ঞেস করে জানলাম সবাই সোয়া একটায় ফরজ নামাজ শেষে বা’দাল জুমা আদায় করছে। জানাযা নামাজ মিস করার ভয়ে জুমা’র নামাজ মিস করলাম। আমাদের ধারণা ছিল সব জায়গার মতো ওখানেও হয়তো ১:৩০ মিনিটে নামাজ শুরু হবে। কারণ, অধিকাংশ মসজিদে খুতবা শুরু হয় দেড়টায়। তবে আজ মহল্লার এক মসজিদে দেখলাম জাস্ট একটায় খুতবা শুরু হলো। নামাজ শেষে দেড়টায় বাজারে গিয়ে দেখি সেখানে এখনো খুতবা শুরু হয়নি। কোন কোন মসজিদে আবার ওয়াজ করতে করতেই দেড়টা পার হয়ে যায়। নামাজ শুরু হয় প্রায় পৌনে দুইটায়। শুক্রবারে জুমা’র নামাজের সময়ের তারতম্যের কারণে অনেকের, বিশেষ করে পথচারী মুসলমানদের জুমা’র নামাজ ছুটে যাওয়ার আশংকা থাকে। এজন্য একই সময়ে জুমা’র নামাজ আদায়ের জন্য ইমামসাহেব ও আলেম-ওলামাদের ঐকমত্যে পৌঁছানো প্রয়োজন।
২. আমাদের দেশের সাধারণ মুসলমানগণ প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে না পারলেও জুমা’র নামাজ নিয়মিত আদায়ের চেষ্টা করেন। তবে এক্ষেত্র মুসুল্লিদের দেরিতে মসজিদে আসার ও সবার আগে মসজিদ থেকে বের হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যদিও হাদিস অনুসারে এর উল্টো চিত্র হওয়ার কথা ছিল। যাইহোক, সাধারণত তিন সময়ে মসজিদ থেকে মুসুল্লিরা বের হয়। প্রথম শ্রেণি ইমাম সাহেব সালাম ফেরানোর সাথে সাথেই বের হয়ে যায়। দ্বিতীয় শ্রেণির মুসুল্লিরা মুনাজাত শেষেই বের হয়ে যান। শুধু তৃতীয় শ্রেণির মুসুল্লিরা ফরজের পরের চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করে বের হন। প্রথম শ্রেণির মুসুল্লিদের সুন্নত না পড়ার পেছনে ইমাম সাহেবদের দায়ী করলেও দ্বিতীয় শ্রেণির মুসুল্লিদের সুন্নত না পড়ার পেছনে ইমাম সাহেবদের দায় আছে বলে মনে করি। কারণ ওনারা সুললিত কন্ঠে এতো দীর্ঘ মুনাজাত করেন ফলে দ্বিতীয় শ্রেণির মুসুল্লিরা নামাজ শেষ এবং তাদের ইবাদত কবুল হয়ে গেছে বলে বাকি সুন্নত না পড়েই বের হয়ে যান। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো, সালাম ফিরিয়ে ইমাম সাহেবগণ যদি ঘোষণা দিতেন, “আপনারা সবাই বা’দাল জুমা আদায় করেন তারপর মুনাজাত করা হবে।” তাহলে অধিকাংশ মুসুল্লি সুন্নত নামাজগুলো আদায় করতেন।
৩. সবশেষে বলবো খুতবা পূর্ববর্তী ওয়াজের সময় মসজিদের বাইরের মাইক ব্যবহার নিয়ে। আমি আগেই বলেছি আমাদের দেশে জুমা’র নামাজ একেক মসজিদে একেক সময়ে হয়ে থাকে এবং মসজিদগুলো একটি আরেকটি থেকে খুব দূরে নয়। তাই যে মসজিদে নামাজ পরে শুরু হয় সেই মসজিদের ইমাম সাহেব যদি মাইকে ওয়াজ করতেই থাকেন তাহলে যেখানে আগে শুরু হয় তারা মাইকের আওয়াজে বিভ্রান্ত হবেন সন্দেহ নেই। একই সময়ে একাধিক মাইকের শব্দ বাসা-বাড়িতে থাকা নারী ও শিশুদের কষ্টের কারণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এজন্য প্রতিটি মসজিদের ভিতরে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা জরুরি।
লেখকঃ মোঃ এনামুল হাসান
ধর্মীয় শিক্ষক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়।