সাইফুল ইসলাম সানি: যুবকের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুরে, মেয়ে শেরপুরের। যুবক দুবাই প্রবাসী, মেয়ে থাকেন সৌদি আরব। টিকটক লাইভের মাধ্যমে দুজনের পরিচয়। অতঃপর প্রেম, ভিডিও কলে হয় বিয়ে। যুবক মিথ্যা বলে মেয়েটির কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন চার লাখ টাকা। গত তিনদিন ধরে মেয়েটি টাঙ্গাইলের সখীপুরে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান করছেন। এসে দেখেন- প্রেমিক তার বিবাহিত, তাঁর ঘরে আছে সুন্দরী স্ত্রী ও এক শিশুপুত্র। বর্তমানে প্রেমিক বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। পরিবারের কাছে মেয়েটি দাবি করছেন- আমার টাকা ফেরত দেন, না হয় স্ত্রীর মর্যাদা দেন, তা না হলে এখানেই আত্মহত্যা করব। এ ঘটনা টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার রতনপুর পূর্বপাড়া পল্টনপাড় এলাকার।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা, প্রেমিক যুবকের পরিবার ও মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সখীপুর উপজেলার রতনপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে সুমন মিয়া (৩৩) দীর্ঘদিন ধরে দুবাই থাকেন। অন্যদিকে শেরপুরের উত্তরা আলিনাপাড়া গ্রামের বইতুল্লাহ শেখের মেয়ে বিথী (২১) তিন বছর ধরে সৌদি আরব প্রবাসী। দুই বছর আগে এই যুবক-যুবতীর পরিচয় হয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম টিকটকের মাধ্যমে। এরপর থেকেই সুমন সৌদি প্রবাসী টিকটকার বিথীকে নানাভাবে প্রেমের প্রস্তাব দিতে থাকেন। বিথী অনলাইন প্রেমে বিশ্বাসী নয় বলে সাফ জানিয়ে দেন। কিন্তু সুমন রাসায়নিক খেয়ে ভিডিও পাঠিয়ে বীথিকে আত্মহত্যার ভয় দেখায়। এভাবে ছয় মাসের চেষ্টায় প্রেমিক সুমন সৌদি প্রবাসী বীথির মন জয়ে সফল হন। পরে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাঁদের বিয়েও সম্পন্ন হয়। পরে সুমন বাড়িতে ঘর দেওয়ার কথা বলে পর্যায়ক্রমে চার লাখ টাকা নিয়েছেন বলেও বিথী এখন দাবি করছেন।
এরপর একসঙ্গে সংসার করতে সম্প্রতি দুজনে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করেন। গত ১৮ এপ্রিল বিথী সৌদি আরব থেকে শেরপুরে তাঁর বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। এদিকে ২১ এপ্রিল প্রেমিক সুমনও দেশে ফিরেন।
বিথী এ প্রতিবেদককে বলেন, দেশে আসার সময় সুমন আমাকে তাঁর বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিল। সেখানে গিয়ে দেখি সুমন আমাকে মিথ্যা ঠিকানা দিয়েছে। পরে টাঙ্গাইল ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় একটি মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে সখীপুরের এই ঠিকানা পেয়েছি। গত রোববার রাতে এখানে এসেছি। এরপর থেকেই সুমন গা ঢাকা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এখানে এসে দেখি সুমনের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। আমি কারও সংসার ভাঙতে চাইনা, আমার কষ্টে অর্জিত টাকাগুলো ফেরত দিতে বলুন, তা না হলে আমি এখানেই আত্মহত্যা করব।
সুমনের মা হাছিনা বেগম বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। ছেলেকে যে টাকা দিয়েছে তার কোনো প্রমাণাদি ওই মেয়ের কাছে নেই। আমার ছেলে বিদেশ চলে গেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জামাল মিয়া বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি। তবে কোনো পক্ষই বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমার কাছে আসেনি। আমাকে ডাকা হলে অবশ্যই আমি যাবো।
এ বিষয়ে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান সখীপুর বার্তাকে বলেন, এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।