27 C
Dhaka
Monday, November 24, 2025

সখীপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে চার প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা

নিজস্ব সংবাদদাতা: সখীপুরে ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে...

সখীপুরে ৮ মাসে ২৪০ জনকে সর্প দংশন, হাসপাতালে নেই অ্যান্টিভেনম

সাইফুল ইসলাম সানি: টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৮ মাসে...

সখীপুরে প্রবাসীর বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপা‌টের ঘটনায় থানায় অ‌ভি‌যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুরে ইতালী প্রবাসীর বাড়িঘর...

ধন্যবাদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ফ্যাক্ট : করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস

জাতীয়ধন্যবাদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ফ্যাক্ট : করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস

দুই শতাধিক দেশ বনাম করোনা। যুদ্ধ যেন থামছেইনা। হাঁপিয়ে উঠেছে বিশ্ব, তবুও কপোকাত হয়নি করোনা। সমগ্র পৃথিবীতে চলছে করোনার আগ্রাসন। অদৃশ্য এই অপদার্থটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পদার্থকে হারিয়ে সাফল্যের মুকুট পড়ে স্বদর্পে রাজত্ব করছে ইউরোপ-আমেরিকা-এশিয়াসহ পৃথিবী জুড়ে। পৃথিবীকে মৃত্যুপুরী তৈরির এই রাজত্ব কবে শেষ হবে, তা এখনও অজানাতীত। তবে বিশেষজ্ঞগণের ধারণা আগামী ৩/৪ বছর থাকবে করোনার রাজত্ব। চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রপ্রধান, ভিআইপি, মন্ত্রী, এমপি কিংবা সাধারণ জনগণ কোন বাছ-বিচার নেই, কোউকেই ছাড় দিচ্ছেনা ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রাতীত এই অপদার্থ। প্রায় পঁাচ লক্ষ মানুষের জীবন নিয়েও ক্ষান্ত হয়নি আরও জীবনের নেশায় বিস্তৃত হচ্ছে দেশ থেকে দেশে। আক্রমণ করেছে প্রায় এক কোটি জীবনকে। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবটি যেন তার লক্ষ্য। মানুষও বসে নেই, যুদ্ধের চ্যালেঞ্জটা যেন সঠিকভাবেই গ্রহণ করেছে। বৈশ্বিক এই অবস্থায় ইউরোপ-আমেরিকার সাথে বাংলাদেশও করোনা যোদ্ধা। ইউরোপ-আমেরিকার হেভিওয়েট দেশে মৃতের সংখ্যা লাখ পেরিয়েছে, আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারত, পাকিস্তান, চীনও পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে। বাংলাদেশেও আক্রান্ত দেড় লাখের কাছাকাছি, মৃতের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার। যুদ্ধের অংশ হিসেবে চলছে লকডাউন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং এবং বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, শপিং সেন্টার কিংবা লোক-সমাবেত। অন্যদিকে চলছে ভ্যাকসিন তৈরির গবেষণা। একের পর এক দেশ ভ্যাকসিন তৈরির সাফল্য দাবি করলেও সত্যিকারের সাফল্য এখনও অতলস্পর্শী।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের আয়-রুজির কথা চিন্তা করে সীমিত আকারে চলছে লকডাউন। সীমিত পরিসরে খুলছে অফিস-আদালতও। কিন্তু এখনও শান্ত হয়নি বিশ্ব, ক্ষান্ত হয়নি করোনা। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকাকে আক্রান্তের সংখ্যা মাথায় রেখে রেড, ইয়েলো এবং গ্রিন জোনে ভাগ করা হয়েছে। এবং নেয়া হয়েছে জোন ভিত্তিক বিভিন্ন পদক্ষেপ। এই পরিস্থিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা কি আদৌ সম্ভব? না, সম্ভব নয়, সংগতও নয়। কারন শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী, প্রায় ১৪ লক্ষ শিক্ষক এবং প্রায় ৮ লক্ষ কর্মকর্তার জীবন আগে, তারপর লেখাপড়া। তাই শিক্ষার্থীরা যাতে লেখাপড়ায় পিছিয়ে না পরে আবার স্বাস্থ্যঝঁুকিতেও না পরে সে দিক বিবেচনা করে সরকার একটি প্রশংসনীয় ডিজিটাল উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারি উদ্যোগে সংসদ টেলিভিশনে রুটিন করে প্রচারিত হচ্ছে ক্লাস, যা সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দেখতে পাচ্ছে, শিখতে পারছে, চালিয়ে নিতে পারছে পড়াশোনা। এছাড়াও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে নিতে অনলাইন ক্লাসের উপর জোর দিয়েছেন শিক্ষকগণ। উপজেলা প্রশাসনও শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাতে না পড়ে সেজন্য নিয়েছেন বিভিন্ন উদ্যোগ, স্থানীয় ক্যাবল টিভিতে লাইভ ক্লাস তার মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া ফেসবুক পেইজ লাইভে, ইউটিউব, ওয়েব পেইজ, জুম, মেসেঞ্জার রুম, গুগল ক্লাসরুম ইত্যাদি ব্যবহার করে শিক্ষকগণ তাদের বিষয়ভিত্তিক ক্লাস শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌছে দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীর কোন প্রশ্ন থাকলে ইনবক্সে করছে, শিক্ষক উত্তর দিচ্ছেন। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক লাইভে এসে ক্লাস নিচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারছে। শিক্ষকগণ সাজেশন তৈরি করে দিচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা সঠিক নির্দেশনা পাচ্ছেন। রিয়াক্ট, কমেন্টস এবং শেয়ারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত জানান দিতে পারছে। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে এমন উদ্যোগ বিরল। মানবতার জননী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এমন একটি ডিজিটাল উদ্যোগ ছিল আমাদের সময়ের দাবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেন সেই দাবীরই বাস্তবায়ন করেছেন। এ কথা অনিস্বীকার্য যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে সাথে নিয়ে দেশকে করেছেন ডিজিটাল, শিক্ষাকেও এগিয়ে নিচ্ছেন ডিজিটালের পথে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, হাতে হাতে মোবাইল ফোন, প্রত্যেক এলাকায় ইন্টারনেট পৌছে দিয়ে মানুষকে করেছেন ডিজিটাল। আইসিটি ব্যবস্থা জোরদার না হলে বৈশ্বিক মহামারীতে আমাদের দেশের কি অবস্থা হতো তা সহজেই অনুমেয়। করোনাকালীন এই সময়ে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস সেই ডিজিটালেরই সুফল। ‘আধুনিক বিশ্ব হবে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর আর শিক্ষা হবে অনলাইন ভিত্তিক’ সেদিন হয়তো আর বেশি দূরে নয়। বাংলাদেশও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই পথেই এগোচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থা হচ্ছে অনলাইন ভিত্তিক এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন করছে। যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত করছে। বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছিল বিধায় এই দু:সময়ে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কিংবা শহরেরও অনেক শিক্ষক বিশেষ করে পঞ্চাশোর্ধ্ব শিক্ষকগণ অনলাইন শিক্ষার ব্যাপারে অনেকটাই অনীহা প্রকাশ করতেন। হয়তো অনলাইন ব্যবহার না জানার কারনে। করোনাকালীন এই সময়ে সেই শিক্ষকগণসহ সকল শিক্ষকগণই শিখে গেছেন অনলাইনের ব্যবহার। এই অনলাইন ক্লাসে যেমনি হয়েছে শিক্ষার্থীদের উপকার তেমনি শিক্ষকদেরও কম নয়। শিক্ষকদের পড়াশোনার চর্চাটাও হয়েছে রীতিমতো। অনলাইন ক্লাসের প্রস্তুতিই শিক্ষকদের পড়াশোনার চর্চা করতে বাধ্য করেছে। সেই জন্যও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। কারন শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে শিক্ষকদেরও পড়ার টেবিলে ফিরিয়েছে এই অনলাইন ক্লাস। আজকাল শিক্ষার্থীদের সাথে সাথে শিক্ষকগণও পড়াশোনার চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন। যার ফলে কমে যাচ্ছিলো মানসম্মত শিক্ষা। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ঘুরেফিরে একটি কথাই আলোচনায় আসছে দীর্ঘদিন ধরে তা হলো, মানসম্মত শিক্ষা। এই অনলাইন ক্লাস এবং তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ক্লাস, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকগণকে পড়ার টেবিলে ফিরিয়ে নিতে পারলে পড়াশোনার আবার সুদিন ফিরে আসবে এবং বাংলাদেশেও হবে বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা।

দারিদ্রতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রধান সমস্যা। সেই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দেখা দেয় দূর্যোগকালীন সময়ে। করোনার এই দূর্যোগে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষ যেন দারিদ্রতার চরম সীমায় বসবাস করছে। তাদের কাছে ডিজিটাল কিংবা শিক্ষা ব্যবস্থার অনলাইন পদ্ধতি নিতান্তই অর্থহীন। শ্রম বিক্রি করে যেসব বাবা-মা সন্তানের লেখা পড়া করান তাদের কাছে অনলাইন ক্লাস একটি দূরুহ ব্যাপার। তাদের হাতে হয়তো নেই স্মার্ট মোবাইল কিংবা ঘরে নেই টিভি, নেই বিদ্যুৎ। দারিদ্রতার কষাগাতে পরে সেইসব শিক্ষার্থীরাও শ্রম বিক্রি করে খাবার জোগাড় করায় ব্যস্ত। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা অলসভাবে সময় কাটানোর ফলে ধীরে ধীরে পড়াশোনা বিমূখ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তাদের আবার পড়ামুখী করা কষ্টসাধ্য হবে। এরকম অলস সময় থেকে তাদের মনে জন্ম নিবে হতাশা, আর হতাশা থেকে তারা জড়িয়ে পড়তে অনেক অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। অনেকে বেছে নেয় আত্মহত্যার মত ঘৃণ্য পথ, অনেকে ছিটকে পড়তে পারে লেখাপড়া থেকে। আবার অন্যদিকে এক শ্রেণির শিক্ষার্থী আছে যারা পড়াশোনা বিমুখ। সেইসব শিক্ষার্থীরা যেন কলেজ বন্ধের এই সময়ে পড়াশোনা থেকে মুখ ফিরিয়েই নিয়েছেন। করোনাকালীন এই বন্ধ তাদরে কাছে ‘ফেসটিভ্যাল ভ্যাকেশন’। অনলাইন মানেই তাদের কাছে টিকটক, লাইকী, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক, টুইটার, ইন্সট্রাগ্রাম, হোয়াটসএ্যাপ, মেসেঞ্জার নয়তো ১৮+ এডাল্ট সাইট। তাদের কাছেও অনলাইন ক্লাস অর্থহীন। আরেকটি বিষয় অপ্রিয় সত্য, তা হলো- শিক্ষকদের পর্যাপ্ত অনলাইন ভিত্তিক তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণের অভাব। যা অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।

সবশেষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও ধন্যবাদ, করোনাকালীন এই সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে জাতিকে সচেতন করে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। নয়তো এই ঘনবসতির দেশে এই কয় মাসে খালি হয়ে যেত লক্ষাধিক মায়ের কোল। আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে বাংলাদেশে লাগামহীন হতে পারেনি করোনা ভাইরাস। লাগামহীন হওয়ার আগেই লাগাম টেনে ধরতেই এই লকডাউন, অফিস-আদালতসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঁাচাতে এবং সংক্রমণের ঝঁুকি এড়াতেই এই অনলাইন ক্লাস। বাংলাদেশ যেমন উন্নয়নশীল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকার দিকে এগোচ্ছে, তার সাথে সাথে দারিদ্রতাও বাংলাদেশ পালাচ্ছে। তাই ডিজিটাল এই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা দিনকেদিন জনপ্রিয় হচ্ছে। দারিদ্রতা ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার অন্তরায় হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পাচ্ছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছানো নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ যেসব পরিবারের শিক্ষাথীরা ঝরে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেইসব শিক্ষার্থীদের বিশেষ প্রণোদনা বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শিক্ষা খাতে আইসিটির গুরুত্ব বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় আগ্রহী করতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষককে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টারনেট সেবা ফ্রী দেয়ার কথাও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা যেতে পারে। অন্যদিকে যেসব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা বিমুখ তাদের অভিভাবকদের সচেতন করে অনলাইন ক্লাসমুখী করতে হবে। যেহেতু ওইসব শিক্ষার্থীরা ফেসবুক, টুইটার অথবা টিকটক, লাইকি’র মাধ্যমে নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করেই আসছে, তাদের অনলাইন ব্যবহারটা যদি পড়াশোনামুখী হয় তাহলে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থাই হবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জনপ্রিয় মাধ্যম।

মো. আলীম মাহমুদ
প্রভাষক, সরকারি মুজিব কলেজ, সখিপুর, টাঙ্গাইল।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles