নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদারীপুরের শিবচরে বিএনপির কর্মীসমাবেশে একাধিক ছাত্রহত্যা মামলার আসামি কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারিকে উপস্থিত থাকার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে জেলাজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাংলাবাজার এলাকায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশে তিনি উপস্থিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লার সঙ্গে কথা বলছেন শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারি।
জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার শিবচরে বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লার একটি সুধী সমাবেশ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের বাদশা বেপারির বাড়িতে বিএনপির একাংশের এ কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএনপি নেতা কামাল জামান নুরুদ্দীন মোল্লা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
নুরুদ্দিন মোল্লাকে স্বাগত জানাতে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পরে সভা মঞ্চেও বিএনপি নেতা নুরুদ্দিন মোল্লার সঙ্গে একান্তে কথা বলতে দেখা গেছে ওই চেয়ারম্যানকে। এ ছাড়া একই অনুষ্ঠানে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজীব হাওলাদারকে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করানো হয়েছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিবচর উপজেলার সন্যাসীরচর এলাকার হৃদয় হোসেন শিহাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ১৮ নম্বর ও শিবচরের ভাণ্ডারীকান্দি ইউনিয়নের নাইমুর রহমান হত্যা মামলার ৩৭ নম্বর আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহসেন উদ্দিন সোহেল বেপারি। অন্যদিকে সজীব হাওলাদার হৃদয় হোসেন শিহাব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৭৪ নম্বর আসামি তিনি।
শেখ নূর উদ্দীন নামে এক ছাত্রদল নেতা বলেন, শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি লতিফ মোল্লার আপন ছোট ভাই কামাল জামান নূরুদ্দীন মোল্লা এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এরপর থেকে নিজেকে বিএনপি নেতা বলে পরিচয় দিতে থাকেন। ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত শিবচরে তার কোনো কার্যক্রম ছিল না। ৫ আগস্টের পরে তিনি হঠাৎ করে প্রকাশ্যে এসে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিএনপিতে পুনর্বাসন করে রাজনীতিতে ফিরতে চেষ্টা করছেন।
অভিযোগ উঠেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যা মামলার দুজন আসামি ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল বেপারি ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সজিব হাওলাদারকে দলে ভিড়িয়ে বিএনপি কর্মী সমাবেশ করছেন। তাছাড়াও নুরুদ্দীন মোল্লার বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আড়িয়াল খাঁ সেতু উদ্বোধন করতে আসার সময়ে ফেরিঘাটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফেরির পন্টুন কেটে দেওয়ার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। অতিসত্বর হাইকমান্ডকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান স্থানীয় নেতারা।
যোগদান বা সমাবেশে উপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে সোহেল বেপারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জানতে নুরুদ্দীন মোল্লার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনিও ফোন রিসিভ করেননি।
শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান বলেন, দেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমাদের ছাত্র-জনতা মারা গেছেন, তাদের হত্যা করা হয়েছে। সেই আসামিদের সঙ্গে বিএনপি নামধারী আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের সখ্যতা রয়েছে। তারা অপতৎপরতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপি এর তীব্র নিন্দা জানাই। যারা এ কাজগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা শিবচর উপজেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
মাদারীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাবলু বলেন, আমাদের হাইকমান্ডের নির্দেশ মোতাবেক আওয়ামী লীগের কারো দলে যোগদান বা দলে নিয়ে একই মঞ্চে বক্তব্য দেওয়া নিষেধ। তবুও এক শ্রেণির লোক এগুলো কেন করে তা বুঝে আসে না। আমরা জেলা ও উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা জানাই।