সাইফুল ইসলাম সানি: দীর্ঘদিন বিভিন্ন রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে চলে গেলেন ’৭১ এর রণাঙ্গণের নায়ক হামিদুল হক বীরপ্রতীক। স্বাধীনতা যুদ্ধের এ বীর নায়ক মৃত্যুর কাছে পরাজয় স্বীকার করে বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ১০ মিনিটে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া…. রাজিউন)। তিনি রাজধানী ঢাকার ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালে চিকাৎসাধীন ছিলেন।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়া কীর্ত্তণখোলা গ্রামের হাবিল উদ্দিন ও কছিরন নেসা দম্পতির ছেলে হামিদুল হক। ১৯৭১ সালে তিনি কচুয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রতি উদ্বুদ্ধ হন। পরে টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দিয়ে বেশ কয়েকটি মুখোমুখি যুদ্ধেও অংশ নেন। ওই সময় তাকে কাদেরিয়া বাহিনীর সহকারী বেসামরিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহস ও বীরত্বের জন্যে হামিদুল হককে বীরপ্রতীক খেতাব প্রদান করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৪২২। ১৯৭২ ও ৭৪ সালে তিনি একাধিকবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিকস, কিডনী রোগ, ঠান্ডা, শ্বাস কষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ ও ফুসফুসের রোগে ভোগছিলেন। খবর পেয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব ও ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ এ বীর মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। গত ২৭ মার্চ থেকে হামিদুল হক বীরপ্রতীক ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত কয়েকদিন ধরে হামিদুল হকের শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টা ১০মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হামিদুল হকের মরদেহ সখীপুরে পৌঁছলে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। বাদ যোহর সখীপুর পিএম পাইলট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে তাঁর প্রথম জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় নিজগ্রাম কচুয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দ্বিতীয় জানাযা এবং সর্বশেষ বিকেল পাঁচটায় কীর্ত্তণখোলা কেজিকে উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরাস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। জানাযায় কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, টাঙ্গাইল-৮ আসনের সংসদ সদস্য অনুপম শাহজাহান জয়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ শওকত শিকদার, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ হাজার হাজার লোক অংশ নেন।