সাইফুল ইসলাম সানি: সখীপুর উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান বাবুল হোসেন নয়ন। সরকারি মুজিব কলেজ থেকে চলতি ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার হয় বাবুল। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হয়নি নয়নের। মিথ্যা মামলায় ২৪ দিন ধরে টাঙ্গাইল কারাগারে বন্দি রয়েছে বাবুল হোসেন নয়ন। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ছেলের মুক্তি না মেলায় ভেঙে পড়েছে নয়নের অসহায় পরিবার। স্থানীয়দের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২১ সেপ্টেম্বর সখীপুর উপজেলার পঞ্চম শ্রেণি পড়–য়া এক ছাত্রী বাসাইলের চাপড়াবিল এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। এর চারদিন পর টাঙ্গাইল ডিসি লেকের পাশ থেকে পরিবারের লোকজন ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে। পরিবারেরে চাপে মেয়েটি নয়ন নামের এক ছেলের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছিল বলে জানায়। পরে ২৬ সেপ্টেম্বর মেয়েটির মা বাদী হয়ে প্রতিবেশী শাহজাহান আলীর ছেলে বাবুল হোসেন নয়নকে আসামি করে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন। পুলিশ নয়নকে গ্রেপ্তার করে মেয়েটির মুখোমুখি করলে মেয়েটি গ্রেপ্তার হওয়া বাবুল হোসেন নয়নকেই ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু নয়ন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওই ছাত্রীকে চিনেনা এবং কক্সবাজারে যায়নি বলে জোর দাবি করতে থাকে। মেয়েটির অনড় অবস্থানের কারণে নয়নকে পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠালে আদালত পুলিশকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সখীপুর থানার এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, জেলগেটে জিজ্ঞাবাদের সময়ও নয়ন বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করছিল। মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় অধিকতর গুরুত্বসহকারে তদন্ত শুরু করি। মেয়েটির কাছ থেকে পাওয়া কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলের ভিজিটিং কার্ডের সূত্র ধরে চলে তদন্ত। পরে ওই হোটেলে দেওয়া মোবাইল নম্বর ও সিসি টিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলে মামলার প্রকৃত রহস্য উন্মোচিত হয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৭ অক্টোবর ঘটনার আসল নায়ক নয়ন মিয়াকে বাসাইল বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে ওই উপজেলার বাঘিল গ্রামের ফারুক ওরফে নূহু মিয়ার ছেলে। পরে গ্রেপ্তার হওয়া নয়ন মিয়া ওই ছাত্রীকে কক্সবাজারের একটি হোটেলে রেখে ধর্ষণ করেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেয়।
এদিকে ঘটনার প্রকৃত আসামি গ্রেপ্তারের ১৪ পেরিয়ে গেলেও কলেজছাত্র বাবুল হোসেন নয়নের মুক্তি মেলেনি। পরিবারের পক্ষ থেকে তার দ্রুত মুক্তির দাবি করা হয়েছে।
কলেজছাত্র বাবুল হোসেন নয়নের বাবা শাহজাহান আলী বলেন, প্রায় একমাস হয়ে যাচ্ছে; আমার নির্দোষ ছেলেটা জেল খাটতেছে। কষ্ট কইরা আমার ছেলেটারে পড়াইতাছি। কিন্তু মিথ্যা মামলার কারণে এবার পরীক্ষাটাও দিতে পারলো না। আমার ছেলের দ্রুত মুক্তি চাই।
সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির হোসেন বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমরা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আশা করছি শিগগিরই নির্দোষ নয়ন মুক্তি পাবে।
এসবি/সানি