18 C
Dhaka
Thursday, January 23, 2025

সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজে ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

জাহিদ হাসান: টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার একমাত্র নারী...

সখীপুরে ব্যবসায়ীর গলা কাটা লাশ উদ্ধার

জাহিদ হাসান: টাঙ্গাইলের সখীপুরে আব্দুস সালাম (৪৮)...

লাবীব গ্রুপে এসএসসি ও এইচএসসি পাশে নিয়োগ, সখীপুরবাসীর অগ্রাধিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: লাবীব গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন Excel...

বৈশাখী মেলা

অন্যান্যসাহিত্যবৈশাখী মেলা

আঃ রাজ্জাক বি.এ.বি.এড

এক রূপসী তিলোত্তম দ্বীপ হচ্ছে বাংলাদেশ। সুজলা- সুফলা শস্য- শ্যামলী, নদী মেলা, বন-কুন্তলা, স্বর্গের উর্বশী, নিঃসীম সৌন্দর্যের মূর্ত প্রতীক বাংলাদেশ। গ্রীম্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত নামক ঋতুচক্রে আবর্তিত বাংলাদেশ। কালচক্রের পরিক্রমায় গ্রীম্ম ঋতু দিয়ে শুরু হয় বাংলা নববর্ষ। নববর্ষের প্রথম মাস বৈশাখ। এ মাসের আগমনে প্রকৃতি হয়ে উঠে সন্ন্যাসীর মতো উদাসীন। সূয্যি মামার তীব্র দাবদাহের শাসনে বসুমতির বক্ষ বিদীর্ণ হয়। প্রখর রৌদ্রে পৃথিবীর রস প্রায় নিঃশেষিত হয়ে যায়। উদ্ভিদ ও জীবজগৎ হয়ে উঠে পান্ডুর ও বিবর্ণ। ধূলি-ধূসরিত হয় রাস্তা ঘাট। বৈশাখের অপরাহ্নে ডাক দেয় কাল বৈশাখী। কাল বৈশাখীর তান্ডবলীলা ধ্বংস করে দেয় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য। তবে কালবৈশাখী কেবল ধ্বংসই করে না: বয়ে নিয়ে আসে জীবন শীতল করা প্রশান্তির ধরা।
‘নববর্ষ’ বিশ্বের সমগ্র জাতির জন্য একটি বিশেষ দিন। নুতনের আগমন: পুরাতনের তিরোধান এ দিনের বৈশিষ্ট্য। নববর্ষ মানবমনে জাগ্রত করে নব উদ্দীপনা। বিশ্বের বিভিন্ন জাতি নতুন বছরকে বরণ করে নেয় নানা আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে। যেমন- ইংরেজগণ পালন করে ‘নিউ ইয়ারসডে’ এবং পারসিরা ‘নওরোজ দিবস’। বাংলা পঞ্জিকার হিসাব মতে- বাঙালি জাতি পালন করে পয়লা বৈশাখ, হালখাতা, পূন্যাহ, নবান্ন, বসন্তবরণ, পহেলা ফাগুন, ঈদ ও বিভিন্ন পূজা পার্বণ।

পয়লা বৈশাখের সাথে বাঙালি জাতির রয়েছে নাড়ীর সম্পর্ক। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখ নিজস্ব গতিতে এসে হাজির হয় বাংলার ঘরে ঘরে। সকল মানুষ উচ্ছ্বাসিত হয়ে প্রাণ ঢালা অভিনন্দন জানায় এ দিনটিকে। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-মাঠে, নগরে বন্দরে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়। চারদিকে পড়ে যায় সাজ সাজ রব। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার ঘুমভাঙ্গে সেদিন আনন্দ শিহরণে। নতুন আমেজে কোলাহল আর আনন্দ উল্লাসে মাতোয়ারা হয়ে যায় সবাই। বৈশাখী মেলায় মাটির, কাঠের, কাগজের ও শোলার তৈরী খেলনা বিক্রি হয়। খৈ, চিড়া, নাড়–, মোয়া প্রভৃতি মুখরোচক খাবার জিনিস আমদানী হয়।
বাঁশ-বেতের তৈরী আসবাব পত্র ও কুমারদের তৈরী বাসন-কোসন, হাতি-ঘোড়া, বাঘ-ভাল্লুকও বিক্রির জন্য আসে। কামারেরা নিয়ে আসে দা, কুড়াল, খোন্তা কোদাল, শাবল, ছুরি ইত্যাদি। এছাড়া তাঁতীদের তৈরী শাড়ী, গামছা, লুঙ্গি ইত্যাদিও মেলায় আনা হয়। চাষীরা তাদের উৎপাদিত পণ্য ফুটি, তরমুজ, শশা, বেল ইত্যাদি ফলাদি বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা বড়দের হাত ধরে মেলায় আসে। তারা চুড়ি, সুতা, বাঁশী, খেলনা ইত্যাদি কেনার বায়না ধরে। বড়রা খুশী হয়ে ছোটদের আবদার পূরণ করেন। কারণ, দিনটি যে সবাইকে খুশি করার দিন।
বৈশাখী মেলা শুধু গ্রাম গঞ্জেই বসেনা, ইদানিং নগর বা শহরেও খুব ঘটা করে পয়লা বৈশাখ পালন করা হয়। ঢাকা মহানগরের মুক্তাঙ্গনে সংগীতের জলসা দিয়ে দিনটির কর্মসূচী শুরু হয়। নানা ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে দিনটি উদযাপিত হয়। প্রচার মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করা হয়। সংবাদপত্রগুলো পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে বিশেষ ‘ক্রোড়পত্র’ প্রকাশ করে। ঘরে ঘরে ভালো খাবারের আয়োজন করা হয়। তন্মধ্যে পান্তা ইলিশ অন্যতম। ইলিশ ছাড়া বাঙালিদের নববর্ষ উদযাপন হয় না। তাই দুর্মূল্যের বাজারেও ধনী-দরিদ্র পেশা বয়স নির্বিশেষে পান্তা ইলিশ চাই। নচেৎ নববর্ষ উদযাপনের অনেকটাই যেন বাকী থেকে যায়। বলতে গেলে ইলিশ বাঙালীর সংস্কৃতির সংগেই মিশে গেছে। মাছে ভাতে বাঙালীর ইলিশ প্রীতি নতুন না হলেও নববর্ষ উপলক্ষে এই প্রীতি আরও বেড়ে যায়। শহুরে মধ্যবিত্তের পান্তা-ইলিশ অনেকটা শখের ব্যাপার। বিত্তশালীদের তো কথাই নেই। পান্তা ইলিশকে কেন্দ্র করে কত রকম খাবারের আয়োজন হয় তা বলা মুশকিল। নিঃস্ব দরিদ্রদের চাহিদা পূরনার্থে মেলায় বসে মাটির সানকিতে পান্তা-ইলিশের দোকান।
বৈশাখী মেলা বা নববর্ষবরণ বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উৎসব। আবহমান থেকেই চলে আসছে বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠান। পূর্বযুগে জমিদার বা সামন্তপ্রভুগণ পহেলা বৈশাখ দিবসে আয়োজন  করতেন ‘পুন্যাহ’ অনুষ্ঠানের। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রজাগণ হাজির হতো খাজনা বা নজর সেলামী নিয়ে। প্রজাগণকে মিষ্টি মুখ করিয়ে বিদায় দিতেন জমিদারগণ। অদ্যাবধি উক্ত ধারাবাহিকতায় মহাজনগণ তাদের দোকানে দোকানে হালখাতার আয়োজন  করে থাকেন। এই দিনটিতে বিগত বছরের ধার দেনা শোধ হয়। ব্যবসায়িক লেন-দেনের ফলে পরস্পরের মধ্যে হৃদ্যতার বন্ধন আরো দৃঢ় হয়। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে নববর্ষ উদযাপনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। ছায়ানটের উদ্যোগে রমনাবটমূলে প্রতি বছর বৈশাখের সূর্যোদয়ের সংগে সংগে বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয় মহাসমারোহে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার উদ্যোগে বৈশাখী র‌্যালির আয়োজন করা হয়। রঙবেরঙের মুখোশ পরে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে র‌্যালিতে অংশ নেয় শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। সকাল না হতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টি.এস.সি চত্বরসহ গোটা রমনা অঞ্চল মুখরিত হয়ে উঠে। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ফ্যাশন হাউসগুলোতেও থাকে নানা আয়োজন।
এভাবে বৈশাখ আসে বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব হয়ে। বাঙালি সংস্কৃতির সাথে এটি এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলা সনের উৎপত্তির সংগে সংশ্লিষ্ট বাঙালির চিন্তা-চেতনা সংযুক্ত হয়ে একই ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। অতীতের দুঃখ-বেদনা, গ্লানি ও ব্যর্থতা পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণের দিন বাংলা নববর্ষ। তাই প্রতিটি বাঙালী তথা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও আদিবাসী  নৃ-গোষ্ঠীসহ সকলেই সার্বজনীন ভাবে প্রাণের আনন্দে বরণ করে নেয় নববর্ষকে।

-লেখক  :  সাবেক সিনিয়র শিক্ষক, সখীপুর পি.এম পাইলট মডেল স্কুল এন্ড কলেজ।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles