27 C
Dhaka
Sunday, April 27, 2025

সখীপুরে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ৫লাখ টাকা অর্থ সহায়ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সখীপুরে অগ্নি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের...

সখীপুরে ধানক্ষেত থেকে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

জাহিদ হাসান: টাঙ্গাইলের সখীপুরে বাড়ির পাশের ধান...

ভার্চুয়াল জগতে চাই শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা

অন্যান্যজীবনধারাভার্চুয়াল জগতে চাই শুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা

হারুন মাহমুদ: আমরা জানি, আবহমান বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতিচর্চা ও সাংস্কৃতিক চেতনা খুবই সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের একটি অন্যতম অঞ্চল টাঙ্গাইলের সখীপুর। সাংস্কৃতিক পরিচয়ে সখীপুর নিজ নামেই সারা দেশে পরিচিত। অপেক্ষাকৃত কিছুটা অনগ্রসর এই সখীপুর অঞ্চল যোগাযোগ ও শিক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রমে কিছুটা পেছনে থাকলেও এর অনেক মূল্যবান গ্রামীণ নিজস্ব সংস্কৃতিকে অস্বীকার করা যায় না কোনোভাবেই। কালুগাজীর পালা, যাত্রাপালা, কবিগান, পালাগান, ভাব-বৈঠকী গান, বাউল গানসহ অনেক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক চর্চা এখনো সখীপুরের চলমান ও ধারাবাহিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে সাধারণ লৌকিক জীবনে প্রবাহিত রয়েছে— যে ইতিহাস বাঙালি ও বাংলা সংস্কৃতির গৌরবোজ্জ্বল মর্যাদায় মহিমান্বিত। দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখে আসছি যে, সখিপুরের সাহিত্য ও সংস্কৃতি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের কারণেই স্বমহিমায় উজ্জ্বল। এজন্যই সখীপুর বাংলাদেশের যেকোনো সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ধারণকারী অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। সখীপুরের সংস্কৃতি বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের মূলধারার সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।

বাংলাদেশের নানা বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির ন্যায় সখীপুরের সংস্কৃতিও শতাব্দীকাল ধরে বিবর্তিত ও বিকশিত হয়েছে এবং বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এখানে জাতীয় জীবনের বাংলা সংস্কৃতির উৎসবগুলো এখনো পালিত হয় মহা ধুমধামের সাথে। সখীপুরের প্রত্যন্ত প্রতিটি গ্রামে এখনো নববর্ষের উৎসব, শীতের পিঠা-পুলির উৎসব, নবান্যের উৎসব, হালখাতা পালিত হয় বাঙালির হাজার বছরের সংস্কৃতির ঐতিহ্য মেনে।

কিন্তু অস্বীকার করার কোনো যুক্তি নেই যে, আমাদের সামাজিক জীবনে একটা নেতিবাচক পরিবর্তনও এসেছে ধীরে ধীরে, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। আরো স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, ভার্চুয়াল সাংস্কৃতিক জীবনে। কিন্তু যখন আমরা এ পরিবর্তনকে স্পষ্টভাবে দেখতে পেলাম, তখন সত্যি অনেক দেরি হয়ে গেছে। আগে সখীপুরের সমাজ ও সংস্কৃতি এমনটা ছিল না। সখীপুরের নিজস্ব ঐতিহ্য, ইতিহাস ও পরিচিতি থাকার পরও আমরা এখন টের পাচ্ছি যেন কোথাও একটু ভুল করেছি। একটু একটু করে আমাদের সেই চেনা ঐতিহ্য, ইতিহাস যেন পাল্টে যাচ্ছে।

সংস্কৃতি মানুষকে বিকশিত করে এবং মানুষের চলার পথকে সুন্দর ও বেগবান করে। দুর্বল সংস্কৃতি সবল কোনো শক্তির ভেতর হারিয়ে গিয়ে অস্তিত্ব বিপন্ন করেও তুলতেও পারে। আমাদের সংস্কৃতি এর আগে কখনও এমন দুর্বল ছিল না এবং এর বিকাশের পথে কোনো বাধাও ছিল না। আমাদের মননে ও দর্শনে বহুকাল ধরেই এক শক্তিমান ঐতিহ্য ধারণ করে আছি আমরা। তবে দারুণভাবে ধাক্কা খাচ্ছে আজ সেই সংস্কৃতি অধরা এক বিজাতীয় আকাশ সংস্কৃতির দাপটে। একটা গোষ্ঠী আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। তারা আমাদের সংস্কৃতির এই মহামূল্যবান যাত্রাপালাগুলোর ভেতরে পশ্চিমা নগ্ন সংস্কৃতিকে মিশিয়ে অত্যন্ত অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করছে সকলের সামনে। সীমাহীন ভাড়ামির মাধ্যমে অশ্লীলতার চর্চা করে প্রতিনিয়ত এই সংস্কৃতিকে এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছে দিচ্ছে যে, এর অঙ্গভঙ্গি ও কাঠামোগত পরিচয় দেখে আর মনে হয় না এই সংস্কৃতি একদিন আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ ছিল। অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ এই কুরুচিপূর্ণ সংস্কৃতিগুলো আমাদের কোমলমতি কিশোর-কিশোরীদের মাথাকে একেবারে বিগড়ে দিচ্ছে। তারা দিনকে দিন বিপথে ধাবিত হচ্ছে।

আমরা সকলেই জানি যে, এখন মোবাইল ফোন নামক এই যন্ত্রটি সকলের হাতে হাতে। এই কারণেই এই অশ্লীলভাবে তৈরি ভিডিওগুলো মুহূর্তের মধ্যে সকলের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ সকল অশ্লীল আঙ্গিকের ভিডিওগুলো দেখে খুব দ্রুতই নষ্ট হবার পথে চলে যাচ্ছে কিন্তু সমাজে যারা এই বিষয়ে সচেতন ব্যক্তি এবং জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তারা কেউ এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না— এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি মনে করি, এই সকল অশ্লীল ভিডিও মাদকদ্রব্য নেশার চেয়েও কমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য বেশি ক্ষতিকর। এক শ্রেণির অসাধু ভিডিও কনটেন্ট ব্যবসায়ী সৃষ্টি হয়েছে যারা এ ধরনের অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড দেয় এবং এতে খুব সহজেই অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের মোবাইলে তা দ্রুত পৌঁছেও যায়। ইউটিউবে অনলাইন ব্যবসায় ভিউ বাড়ানোর জন্য যেন অশ্লীল ভিডিও তৈরির একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে রীতিমতো। রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, শিক্ষক সমাজ ও শিক্ষা-সংস্কৃতি সচেতন মানুষেরা যদি এ ব্যাপারে এখনই সচেতন না হয় এবং এই সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের যদি প্রতিরোধ না করে তাহলে একসময় আমাদের কোমলমতি শিশুরা নষ্ট হওয়ার চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে যাবে— যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি মনে করি, উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে এ সকল অশ্লীল ভিডিও কনটেন্ট নির্মাতা ও প্রচারকারীদের প্রতিরোধ করে আমাদের অনাগত ভবিষ্যতের প্রজন্মকে রক্ষা করবে যাবতীয় নেতিবাচক বিষয় থেকে।

-লেখক: শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, গ্রাফিক্স ডিজাইনার ও ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটর।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles