বিনোদন বার্তাঃ আজ বিশ্ব মা দিবস। এদিন প্রত্যেকেই কামনা করেন তাদের মা যেখানে যেভাবে আছেন, যেন ভালো থাকেন, সুস্থ থাকেন। অনেকের মা এই পৃথিবী ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন। সেই মায়েদের সন্তানদের কামনা থাকে একটাই, মা যেন বেহেশতবাসী হন কিংবা মা যেন শান্তিতে থাকেন। আমাদের সংস্কৃৃতি অঙ্গনের তারকারা মা দিবসে তাদের মায়েদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানিয়ে তাদের না বলা কথা প্রকাশ করেছেন। সংকলন করেছেন অভি মঈনুদ্দীন (দৈনিক বাংলাদেশের খবর)।
ওমর সানী : বেশ কয়েক বছর আগে আমার মা আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। সব সময়ই মায়ের জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন আমার মা-বাবাকে বেহেশত নসিব করেন। দোয়া ছাড়া তো আসলে এখন আর কিছুই করার নেই। আমার জীবনের চলার প্রতিটি পদক্ষেপে মাকে খুব মসি করি। মা যখন বেঁচে ছিলেন তখন অনেক দেরিতে শুটিং থেকে বাসায় ফেরা হতো আমার। তখন মনে মনে ভাবতাম সবাই রাতের খাবার খেয়ে ফেললেও আমার মা নিশ্চয়ই খাননি। ঠিকই বাসায় ফিরে দেখতাম, মা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আসলে মায়ের সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। মা যে আমার জীবনে কী ছিলেন, তা বলে বোঝাতে পারব না। এমনও হয়েছে মায়ের হাতে রাতে টাকা দিয়েছি ওষুধ কেনার জন্য। কিন্তু সকালে আমি টাকা চাওয়ায় আমাকে ওই টাকা থেকেই দিয়েছেন। পরবর্তীতে আমি যখন জানতে পারি রাতে মায়ের জন্য ওষুধ কিনে বাসায় ফিরেছি। মাকে নিয়ে কথা বলে শেষ করা যাবে না। সবাই আমার মা-বাবার জন্য দোয়া করবেন।
মৌসুমী : প্রতিদিন কখনো আয়োজন করে আসলে বলা হয় না মাগো তোমায় অনেক ভালোবাসি। আমি আমার মা-বাবার প্রথম সন্তান। প্রথম সন্তান হিসেবে জন্মের পর থেকেই অনেক আদর, স্নেহ মায়া মমতায় আমি বেড়ে উঠেছি। মায়ের সঙ্গে সেই ছোটবেলা থেকেই আমার সখ্য। মায়ের আদর স্নেহ ভালোবাসায় প্রত্যেক সন্তানই বেড়ে ওঠে। আমার কাছে মনে হয় আমার মা আমাকে একটু বেশিই ভালোবাসতেন। তাই কখনোই আমার মা আমাকে চোখের আড়াল হতে দিতেন না। আমি যখন মিডিয়ার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করলাম এবং পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করলাম, আমার প্রয়াত বাবাই প্রতিটি মুহূর্তে আমার পাশে থেকে থেকে আমাকে উৎসাহ দিতেন। আমার প্রতি তিনি এতটাই সচেতন ছিলেন যে আমাকে কীভাবে ভালো লাগবে, আমার অভিনয় কীভাবে ভালো হবে, সেদিকে তার সজাগ দৃষ্টি থাকত। এটা সত্য, আমার বাবার কারণেই কিন্তু অভিনয়ে নিজেকে আমি এতটা ভালো অবস্থানে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন আম্মুর বয়স হয়েছে। টুকটাক কিছু অসুস্থতা লেগেই থাকে। তারপরও আম্মু যতটুকু সময় পান আমার কাজগুলো দেখার চেষ্টা করেন। আমাকে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করেন। এখনো আমি বাইরে থেকে বাসায় ফেরার পর মাম্মি বলে যখন আম্মু ডাকেন তখন প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। ছোটবেলায় আম্মুর আদরে ভালোবাসায় আমি বেড়ে উঠেছি, সেই ভালোবাসার মায়াজালেই আমার আম্মুকে সারাটা জীবন আমি আমার কাছে রাখতে চাই।
পূর্ণিমা : মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়ায় আমি আজকের পূর্ণিমা। তাই মায়ের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন আমার মাকে সব সময় ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন। সেই মায়েরই মেয়ে আমি নিজেও একজন মা। তাই মায়ের কষ্টটা এখন খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। মায়ের কোনো তুলনা হয় না। না জেনে না বুঝে মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আর কখনো মাকে কষ্ট দিতে চাই না। সবাই আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন। আর আমার বাবাকে যেন আল্লাহ বেহেশতবাসী করেন, সেই দোয়াও চাই সবার কাছে।
পপি : আজ আমার জীবনের অন্যরকম দিন। কারণ চলচ্চিত্রে আমার সাফল্যের জন্য আমার মা আজ সকালে ‘গরবিনি মা সম্মাননা’য় ভূষিত হতে যাচ্ছেন। তাই আজকের দিনটা আমার জীবনের স্মরণীয় একটি দিন হতে যাচ্ছে। ধন্যবাদ ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্ত্তীকে। আর আজকের দিনে বারবার শুধু বলতে চাই, আম্মু আমি তোমাকে অনেক অনেকে ভালোবাসি। কিন্তু তোমাকে তা বলে হয়ে ওঠে না। তোমাকে নানা সময় অনেক কষ্ট দিয়েছি। ক্ষমা করে দিয়ো। আর আমাদের সব ভাইবোনকে তুমি তোমার আশীর্বাদের মধ্যে রেখো সব সময়। তুমি ছাড়া আমার এত সুন্দর জীবন কখনোই হয়ে উঠত না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে আমি তোমার গর্ভে জন্মেছি মা। আমি এর আগে অভিনয়ের জন্য তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি। কিন্তু আজ মা আমার জন্য সম্মাননা পাচ্ছেন, এটাই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম অর্জন।
তারিন : আমার আম্মুর নাম তাহমিনা বেগম, আমার জীবনের আদর্শ। আমার শক্তি, আমার অনুপ্রেরণা, আমার সবকিছুই আমার মাকে ঘিরে। মা মাটি দেশ, এই তিনটি বিষয়ের মানুষের জীবনে অবদান অনস্বীকার্য। মা শব্দটি তাবৎ পৃথিবী সম্পর্কিত একটি শ্রদ্ধার শব্দ। এই পৃথিবীর আলো বাতাস এই যে নিঃশ্বাস নিচ্ছি তা মায়ের ত্যাগের কারণেই জন্মের শুরু থেকেই নিতে পারছি। মায়ের যেমন বিকল্প হয় না, ঠিক তেমনি মায়ের কোনো তুলনা হয় না। আমার জীবনে মায়ের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। ছোটবেলা থেকে আমার বেড়ে ওঠা, আমার শিক্ষা, আমার নৃত্যশিল্পী হয়ে ওঠা, সঙ্গীতশিল্পী হয়ে ওঠা, সর্বোপরি একজন অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পেছনে আমার মায়েরই অবদান সবচেয়ে বেশি। মায়ের কাছেই আমার গানে হাতেখড়ি। অভিনয়জীবনের শুরুতে মা-ই ছিলেন আমার কো-আর্টিস্ট। যখন কোনো স্ক্রিপ্ট হাতে পেতাম তখন মা-ই হতেন আমার কো-আর্টিস্ট। অভিনয়ের চর্চা করতাম এভাবেই। আর এভাবেই আমার অভিনেত্রী হয়ে ওঠা। আমার মা খুব মেধাবী ছিলেন। তার ইচ্ছে ছিল বলেই আমি আজ অভিনেত্রী তারিনে পরিণত হতে পেরেছি। আমার মা যেভাবেই থাকুন, সব সময়ই যেন আল্লাহ ভালো রাখেন- এই দোয়া চাই সবার কাছে।’
শাহনূর : বেশ কয়েক বছর আগে আমি আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে হারিয়েছি। আমার মা তাসলিমা খানম কিছুদিন আগে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। এই পৃথিবীতে আমার মায়ের মতো আপন আর কেউ নেই। তাই মায়ের এমন অসুস্থতায় আমি প্রায় পাগলই হয়ে গিয়েছিলাম। যাই হোক সবার দোয়ায় আমার আম্মু এখন বেশ সুস্থ আছে। সত্য বলতে কী আম্মুই আমার পৃথিবী। আম্মুর কাছেই আমি প্রথম নাচ ও গান শিখি। আমার মাকে আমি কখনোই কোনো কারণে কষ্ট দিইনি। যদিও বা ভুল করে দিয়ে থাকি আম্মু যেন আমায় ক্ষমা করে দেন। আমার খুব ইচ্ছে করে পুরো পৃথিবীর সবটুকু সুখ আম্মুকে দিতে।
বুবলী : মায়ের কথা বলতে গেলেই সবার আগে আমার নানুর কথা ভীষণ মনে পড়ে। বিশেষত রোজার মাস এলে নানুর কথা যেন একটু বেশিই মনে পড়ে। কারণ নানুর সঙ্গে থেকে থেকেই আমি নামাজ পড়া শিখেছি, রোজা রাখতে শিখেছি। সেই নানু যখন আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন তখন আমার আম্মুকে দেখেছি তিনি কতটা কষ্ট পেয়েছেন। সত্যি বলতে কী মা এমন একজন মানুষ প্রতিটি মানুষ তার মনের ভেতরে শ্রদ্ধার স্থানে রেখে দেন। নানু চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু নানু আমার মায়ের মাঝে, আমার মাঝে বেঁচে আছেন। আমরা যখন শুধু তিন বোন ছিলাম, তখন সবার ছোট বলে আম্মু আমাকে মোহাম্মদ বলে ডাকতেন। আমাকে ছেলেদের পোশাক পড়িয়ে রাখতেন। কিন্তু যখন আমি একটু বড় হতে লাগলাম, যখন বুঝতে শিখেছি যে মোহাম্মদ ছেলেদের নাম তখন আমার খুব অভিমান হতো, কেন আমাকে ছেলেদের নামে ডাকা হবে। যাই হোক পরবর্তীতে আম্মু আমাকে ভুবন বলে ডাকতে শুরু করেন। সেই যে আমাকে আম্মু ভুবন বলে ডাকতে শুরু করলেন, এখনো ভুবন বলেই ডাকেন। আমার আজকের অবস্থানের পেছনে আম্মুরই অবদান সবচেয়ে বেশি। আমি যখন সিনেমাতে কাজ শুরু করি তখন পরিবার থেকে প্রতিবন্ধকতা ছিল। আম্মুর মত ছিল না। কিন্তু আমি আম্মুকে কথা দিয়েছিলাম যে আমি এমন কিছু করব না, যার জন্য তোমাকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আলহামদুলিল্লাহ আমি আম্মুকে দেওয়া কথা রেখেছি, এটাই আমার ভালোলাগা।
আঁখি আলমগীর : আমি খুব ভাগ্যবান একজন সন্তান। আমার বাবার কারণে আমাদের বাসায় অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী বাসায় আসতেন। আবার আমার মায়ের কারণে অনেক কবি-সাহিত্যিকের আনাগোনা ছিল বাসায়। আমার সঙ্গীতজীবনের পথচলায় আমার বাবা-মা সব সময়ই আমার পাশে ছিলেন এবং এখনো আছেন। আমার মায়ের লেখা অনেক গান আছে। মায়ের লেখা গান নিয়ে আমার গাওয়া এবং বিশিষ্ট শিল্পী যারা গেয়েছেন সেই হিট গানগুলো নিয়ে একটি অ্যালবাম করার পরিকল্পনা করছি। এটা আমার মায়ের প্রতি, মায়ের লেখা গানের প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা থেকেই করব। কারণ এখন পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম কেউ শোনেন না। কিন্তু আমার মায়ের গানগুলো সংরক্ষণ করার জন্যই আমি তা করব। আমার মায়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন, মা যেন সব সময় ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন। কারণ মায়ের কারণেই আজকের এই সুন্দর পৃথিবী দেখা। মা যে কতটা আগলে রেখে আদর ভালোবাসা দিয়ে আমাকে বড় করেছেন, তা নিজের সন্তানের প্রতি সেই ভালোবাসার অনুভব থেকে উপলব্ধি করি প্রতি মুহূর্তে।
মোজেজা আশরাফ মোনালিসা : আম্মুই আমার জীবনের সব। আম্মুই আমার জীবনের চলার পথের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা, শক্তি। আম্মুই আমার জীবনকে গড়ে দিয়েছেন। যে কারণে আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি দেশের বাইরে এসেও জীবনকে পরিচালিত করতে পারছি। আমার জীবনে আম্মুর শিক্ষা, আম্মুর আদর্শ, আম্মুর ভূমিকা অপরিসীম। আম্মু আমাকে অনেক ভালোবাসেন, আদর করেন, আর এটা আমি এখন খুব মিস করি। প্রতিদিনই এখন আর আগের মতো বলতে পারি না মাগো আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। তারপরও বারবার বলতে ইচ্ছে করে আমার মাকে আমি আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। মাকে কেউ জেনে শুনে কষ্ট দিতে চায় না। আমিও চেষ্টা করি আমার কোনো কারণে যেন আম্মু কষ্ট না পান। আমার খুব ইচ্ছে করে পৃথিবীর সব সুখ আম্মুকে দিতে। আমার আম্মু সব সময়ই ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক এই দোয়াই করি।
জাকিয়া বারী মম : আমার আব্বু-আম্মুকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। আর কোনোদিন আব্বু-আম্মুকে কষ্ট দিতে চাই না। কোনোভাবেই না, কোনো কারণেই না। আমার জীবনে একটিই প্রধান চাওয়া আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তারা যেন আমার কাছ থেকে আর কোনো কষ্ট না পান। তাদের মুখে যেন সারাক্ষণ হাসিই লেগে থাকে। আমার জীবনে আমি যা কিছুই ভালো করেছি তার সবই আমার আম্মা-আব্বার অবদান। আর যা খারাপ করেছি সবই আমার। আম্মু আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তিনি আমার আদর্শ। আমার আম্মু একজন অধ্যাপক। একজন মানুষ এত পরিশ্রমী হয়, তা আম্মুকে না দেখলে বিশ্বাস করা সম্ভব না। আব্বু আমাদের পরিবারের স্তম্ভ। আমার ছোট ভাই মনন ও তার স্ত্রী মৌমিতার মতো আমার দুজন ভালো বন্ধু আছে একই পরিবারে, এটাও আমার জন্য আশীর্বাদ। আমার অনেক কিছুই নেই হয়তো কিন্তু আমার শিক্ষিত মা এবং শিক্ষিত একটি পরিবার আছে। ভালো মানুষ আর শিক্ষিত মানুষ পাশে থাকার মতো খুঁটি আর কিছুই নেই জীবনে। আমার পরিবারে তা আছে। আর তাই আমি বারবার জন্ম নিলে এই পরিবারেই জন্মাতে চাই। আমি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ।
মেহজাবিন চৌধুরী : আমার আম্মু গাজালা চৌধুরী। আমার জীবনে চলার পথের প্রতিটি পদক্ষেপে আম্মু আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। অভিনয়জীবনের আজকের সাফল্যেও পেছনে আম্মু আমার প্রতিটি পদক্ষেপে সঙ্গে ছিলেন। যে কারণেই কিন্তু আমি আজকের মেহজাবিন হতে পেরেছি। না জেনে না বুঝে আম্মুকে কষ্ট দিয়েছি। তবে তাকে অনেক বেশি কষ্ট দিইনি আমি। তারপরও আম্মুর কাছে স্যরি। আম্মু প্রায়ই তার শরীরের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তার মাথা ব্যথা করে, কোমর ব্যথা করে, ডায়াবেটিসের সমস্যা। তাই এসব কথা যখন শুনি তখন মনে হয় নিজের শরীরটা কেটে যদি আম্মুকে দিয়ে দিতে যদি পারতাম, তাতেও যদি আম্মু পুরোপুরি সুস্থ থাকতেন আমি শান্তি পেতাম।
ইশানা : আমার অভিনয়জীবন, আমার ব্যক্তিজীবন এবং আমাকে সম্পূর্ণরূপে একজন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমার মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিটি মুহূর্তে আমি আমার আম্মুকে পাশে পাই নানান বিপদে আপদে কিংবা যেকোনো কিছুতেই। আমার জীবনের চলার পথের প্রতিটি পদক্ষেপে আম্মুর গাইডলাইন, আম্মুর সাপোর্ট আমি ভীষণভাবে নিয়ে থাকি। চেষ্টা করি আম্মু যেন কোনো কারণে আমার কাছ থেকে কষ্ট না পান। তারপরও যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন কোনো কারণে আম্মু যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমার আম্মু আমাকে বাবু বলে ডাকেন। আমার আম্মুর নাম নীলিমা। তাই আম্মুকে কখনো আম্মু, কখনো মা, কখনো নীলিমা বলেও ডাকি। সবগুলো নামের মধ্যে এক অন্যরকম মায়া ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। আমি সারাটি জীবন আমার আম্মুর পাশে পাশেই থাকতে চাই।
লিজা : আমার সঙ্গে আমার আম্মুর সম্পর্কটা একটু অন্যরকম মধুর সম্পর্ক। আমার বাবার সঙ্গেও। তাদের দুজনকে সব সময়ই আমার এটা-ওটা গিফট করতে ভীষণ ভালো লাগে। আম্মুর সঙ্গে ঝগড়া করি, আবার কিছুক্ষণ পর স্যরিও বলি। মা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন মধুরতর হয়, তেমনই সম্পর্ক আমাদের দুজনের। আম্মুর হাতের রান্না করা খাবার ছাড়া আমার আর কোনো খাবারই একদমই ভালো লাগে না। তাই যখন শোর কারণে দেশে-বিদেশে থাকতে হয় তখন খাওয়া নিয়ে আমার খুব সমস্যা পড়তে হয়। আম্মু সব সময়ই আমার গান শোনেন। আমার গানের মধ্যেই আমি অন্যরকম সুখ খুঁজে পান। আমার লিজা নামটি আমার আব্বুর রাখা। আমার আম্মু-আব্বু আমাকে নিয়ে গর্ব করেন সব সময়। এটা আমাকে পুলকিত করে। আমি সব সময়ই চেষ্টা করব আমার কারণে যেন কখনো তারা কষ্ট না পান। তাদের জন্যই আমার এই পৃথিবীতে আসা। তাই সারাটি জীবন তাদের জন্যই নিবেদিত হয়ে থাকতে চাই।
জিনিয়া জাফরিন লুইপা : আমার আম্মু বুঝেছিলেন বিধায় আম্মু আমাকে গানের সঙ্গে ছোটবেলায় সম্পৃক্ত করে ছিলেন। আম্মু বুঝতে পেরেছিলেন আমাকে দিয়ে গানটাই ভালোভাবে করিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তাই আম্মুর শতভাগ চেষ্টায় আমি নিজেকে আজকের একজন সঙ্গীতশিল্পীতে পরিণত করতে পেরেছি। মহান আল্লাহর কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা যে তিনি আমাকে এমন একজন মায়ের গর্ভে জন্ম দিয়েছেন। আম্মুর সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্র সম্পর্কেই সব সময় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং জানেনও বটে। তবে তিনি আমার মধ্যে সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগটা বেশি দেখেছিলেন বলেই আমাকে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। আমি মাকে জীবনে একবারই অনেক বড় কষ্ট দিয়েছি। বুঝতে পেরেছিলাম যে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু এটাও সত্যি পরবর্তীতে তা সবার জন্যই মঙ্গল হয়েছে। এখন আমরা পরিবারের সবাই বেশ ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। আর মা দিবসে আম্মুর প্রতি অনকে অনেক ভালোবাসা। আমার আম্মু পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আম্মু।
ইউসুফ আহমেদ খান : ‘মা’ শব্দটা অনেক কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর। ছোটবেলা থেকে মাকে ভালো কোনো খবর আমি দিতে পেরেছি বলে মনে পড়ে না। আমার দুষ্টুমি আর পড়ায় অমনোযোগিতা মাকে কথা শুনিয়েছে বহুবার। কিন্তু শত আঘাতেও নীরবে কেঁদে আমার মা আমাকে বুঝিয়েছেন আমি আলাদা। সবার থেকে আলাদা। বুঝিয়েছেন আমি পারব। আমার কোনো একদিনের সাফল্যের হাসির অপেক্ষায় কেটেছে মায়ের এই জীবন। মিথ্যে বলব না। একসময় নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হতো। এখনো হয় না, তা নয়। তবে আমি বুঝে গেছি, আমি কিছু পারি আর নাই পারি, মায়ের কাছে আমি সেরা। আর সেটা বোঝার পরে বুঝেছি, আমার মা পৃথিবীর সেরা মা। মাকে অনেক কাঁদিয়েছি, হয়তো আরো কাঁদাব। তবে শেষ দিন পর্যন্ত চেষ্টা করব মা বাবার এই জীবনের কষ্টের দাম দিতে, জানি পারব না। তবে এই চেষ্টায় আমি হারব না।
সানজিদা মাহমুদ নন্দিতা : আমার সঙ্গীতজীবনে মায়ের ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না। আমাকে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার মধ্য দিয়েই মা তার নিজের ইচ্ছেটা পূরণ করেছেন। মা আমাকে সব সময়ই বলতেন আমি যেন গানটাকে কখনো না ছাড়ি। তাই ছোটবেলায় মায়ের কথামতো বাবা বাসায় গানের ওস্তাদ রেখে দিয়েছিলেন। আমি আর আমার ছোট ভাই গান শিখতাম। কিন্তু দেখা যেত যে আমরা এত ছোট ছিলাম যে আমার মা ওস্তাদের কাছ থেকে গান তুলে রাখতেন পরবর্তীতে মায়ের কাছে আমরা তা শিখতাম। এভাবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মা আমাকে পড়াশোনাও করাতেন আবার গানও শেখাতেন। ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখেছি অনেক কঠিন কঠিন গান ক্যাসেটে শুনতেন। সেসব গানই মা আমাকে তুলে দিতেন। যে কারণে অনেক কঠিন গানও আমার কাছে সহজ হয়ে যায়। ছোটবেলায় নানান ধরনের প্রতিযোগিতায় মা-ই আমাকে নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। তাই আমার আজকের এই সাফল্যের পেছনে মায়ের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি। কিন্তু পরবর্তীতে যখন তা উপলব্ধি করেছি তখন খুব খারাপ লেগেছে। সত্যি বলতে কী মাকে কখনো কলা হয়ে ওঠে না কতটা ভালোবাসি, কতটা অনুভব করি। তাই আজ বলতে চাই মা, তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
নীশিতা বড়ুয়া : আমার সঙ্গীতজীবন গড়ে ওঠার নেপথ্যে আমার মায়ের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। আমি জয়েন্ট ফ্যামিলিতে বড় হয়েছি। আমার কাকুরাও আমাকে শাসন করতেন। আমার মা তা মেনে নিতেন। কারণ আমার মা চাইতেন সব সময় সবাইকে একই সুতোয় গেঁথে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। আমার পরিবার ভীষণ কনজারভেটিভ একটি পরিবার। তারপরও মায়ের কারণেই আমি দেশের বাইরে দুই বছর পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। এইচএসসি পাস করার পর যখন চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলাম তখন পরিবারের সবাই যেখানে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়ার বিরোধী তখন আমার মা-ই সেখানে পড়ার সাহস জুুগিয়েছিলেন। ক্লোজআপ ওয়ান অডিশনে যখন আমাকে কোনোরকম কার্ড দেওয়া ছাড়াই ওয়েটিং লিস্টে রাখা হয়েছিল তখন রাত ১২টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু আমার মাকে বাইরে থাকার প্রত্যেকটা কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল। তাই মায়ের সহযোগিতা ছাড়া আমার আজকের নীশিতা হয়ে ওঠা হতো না। এখন সাধারণত আমি নিজেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। কিন্তু যেখানে নড়বড়ে হয়ে যাই তখন মা-ই আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পাশে থাকেন। মায়েরা এমনই, সব সময় ভালোই বেসে যেতে পারেন। আমার মাকে আমি কষ্ট দিয়েছি বলে আমার মনে পড়ে না। আমি একটু রাগী, একটু বেশি স্ট্রেট ফরওয়ার্ড। মনে আছে একবার আমার জন্য আমার মাকে কাঁঁদতে হয়েছিল যখন আমি পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষার জন্য যখন নির্বাচিত হতে পারিনি। মাকে দেখেছিলাম কান্না করছেন। পরবর্তীতে একটি পরীক্ষায় আমি ১০০-তে ৯৯ পেয়েছিলাম। মা খুশি হয়েছিলেন। মায়ের খুশির জন্যই সারাটা জীবন কাজ করে যাব।
(সূত্র: দৈনিক বাংলাদেশের খবর থেকে নেওয়া)