মুফতি আহমদ আবদল্লাহ: শবে বরাত, শাব্দিক অর্থ নাজাতের রাত, মুক্তির রাত বা ভাগ্য নির্ধারণের রজনী। এ রাতই সে সৌভাগ্যরজনী যে রজনীতে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তার গুনাহগার বান্দাদের দোজখ থেকে মুক্তি লাভের একটি বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনে রোজা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে এসে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোনো রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দিবো। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)
প্রথমে গোসল করে নেয়া মুস্তাহাব। তবে রাত আগমণের পূর্বেই আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন থাকলে তা ঠিক করে নিবে। কারও হক থাকলে তা আদায় করে দিবে। অন্তরকে কলুষমুক্ত করে নিবে। প্রিয়নবীর পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মাফ হওয়া সত্ত্বেও যখন শবেবরাত আসতো, তখন এ রাতের ফজিলতের কারণে পুরো রাত তিনি ইবাদতে কাটাতেন বলে অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। এ রাতে তার এত বেশি ইবাদত করা দেখে হজরত আয়েশা (রাযি.) প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বলেন, ‘আমি কী এ মহান রাতের বরকত অর্জন করবো না?’ তবে এ ক্ষেত্রে এই বিষয়টিও মনে রাখতে হবে যে, এ রাতের নফল আমলসমূহ বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরজ নামাজতো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদিসেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর কোনো রেওয়াজ ছিল না। (মারাকিল ফালাহ ২১৯)।
শবে বরাতে বর্জনীয়:
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শবে বরাত একটি পূর্ণময় রজনী হওয়া সত্ত্বেও নানা পারিপার্শ্বিক কারণে তাতে এমন কিছু কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে যা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। অন্যথায় এসব কার্যাবলী আমাদের ইহ-পরকালের জীবনে কল্যাণ ও মুক্তির পরিবর্তে অকল্যাণ ও বিপদ বয়ে আনবে। যেমন: ১. আতশবাজি। ২. হালুয়া-রুটির বিশেষ আয়োজন। ৩. প্রয়োজনাতিরিক্ত আলোকসজ্জা। ৪. মাজারে বা গোরস্তানে মেলা উৎসব করা। ৫. একাগ্রতার প্রতি লক্ষ্য না দিয়ে ইবাদত ইত্যাদিতে বাহ্যিক জাঁকজমকের দ্বারা অনুষ্ঠানসর্বস্ব করে তোলা। ৬. হা-ি-বাসন বদলানো। ৭. গলিকুচায়, শহরে-বন্দরে ঘোরাফেরা ও হই-হল্লোড় করা ইত্যাদি। আমাদের জন্য সমাগত শবেবরাত রজনীটি হোক অতীত কৃতকর্মের যাবতীয় অন্যায়ের ক্ষমা প্রার্থনার কান্নাভেজা রজনী। এ রজনী হোক অন্যায় অশ্লীলতা ও গর্হিত কর্মকা- পরিত্যাগ করার দৃঢ় প্রত্যয়। এবারের শবেবরাত হোক শিরক-বিদয়াতসহ যাবতীয় কুসংস্কার সমূলে উৎখাতের এক বজ্র শপথ। এবারের শবেবরাত হোক মহান মাওলার শাহী দরবারে অশ্রুর নজরানা পেশ করে মহান দরবার থেকে মহামুক্তি লাভের এক দীপ্ত প্রতিজ্ঞা। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সূত্র: আমাদের অর্থনীতি