- মামুন হায়দার: নতুন বইয়ের ভাঁজে, কোমল প্রাণের স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত শিশু শিক্ষার্থী শাহীন (১১) আজ শনিবার থেকে আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করছে। নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে উচ্ছ্বাস, উচ্ছলতায় মুক্ত বিহঙ্গের মতো স্কুলে লেখাপড়ার সুযোগ হলো তার। আর এ সুযোগটি করে দিলেন সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত শিকদার। অবাধ শিশুশ্রম থেকে মুক্ত হলো শাহীন। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশু শ্রমিকের লেখাপড়ার দায়িত্বও নিয়েছেন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত শিকদার। ওই শিশু শ্রমিকের নাম শাহীন (১১)। বাড়ি উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা নিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে গণসংযোগ করেন সখীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ শওকত শিকদার। সন্ধ্যার দিকে তিনি কচুয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও স্থানীয় জনগণের সঙ্গে ওয়ার্ডের দলীয় কার্যালয়ে মতবিনিময় করছিলেন। এ সময় শিশু শ্রমিক শাহীন সভা চলাকালে চা-পান দিচ্ছিলেন সকলের হাতে হাতে। এক পর্যায়ে শাহীন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নজরে আসে। পরে তিনি শাহীন ও তার বাবাকে ডেকে এনে তার বিদ্যালয়ে না যাওয়ার কারণ জানতে চান। এ সময় শাহীন তার পরিবারের অভাব-অনটনের কথা জানায় এবং লেখাপড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিকভাবে তার লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। মতবিনিময় সভায় ওই শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করাসহ তার খাতা-কলম ও স্কুল পোষাকের জন্য নগদ অর্থও দেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান । ওই অনুষ্ঠান শেষে শাহীন বলে, বাবা মিনহাজ মিয়া কচুয়া বাজারের একজন চা বিক্রেতা। সে জানায়, স্থানীয় কচুয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও অভাবের তাড়নায় কিছুদিন পর স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন তার চা বিক্রেতা বাবা। তিন ভাইয়ের মধ্যে সেই বড় ছেলে। সংসারে অভাব-অনটন থাকায় লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে গত এক বছর ধরে বাবার দোকানে চা টানার কাজ করছে ওই শিশুটি। স্কুল ড্রেস পরে বই-খাতা নিয়ে আবার স্কুলে যেতে পারবে, সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে পারবে এমন আশ্বাসে শিশুটির চোখের কোণে আনন্দাশ্রু ঝরছিলো। তার চোখে মুখে বিচ্ছুরিত হচ্ছিলো অনেক কিছু পাওয়ার আনন্দ। উপস্থিত সকলেই শিশুটিকে স্পর্শ করে সহানুভূতির আদর বুলিয়ে দেন। ওই সন্ধ্যায়ই তার স্কুল পোশাক বানানোর জন্য স্থানীয় একটি টেইলার্সে অর্ডার দেওয়া হয়। আজ শনিবার সকালে সেই কচুয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে শিশুশ্রমিক শাহীন নতুন করে লেখাপড়া শুরু করেছে। ওই মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল হক বাপ্পা, স্থানীয় কচুয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মো. আবদুল আলীম, ইত্তেফাকের সখীপুর প্রতিনিধি মামুন হায়দার, যায়যায়দিন প্রতিনিধি সাজ্জাত লতিফসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ শওকত শিকদার বলেন, শিশুশ্রম নিরসনে আমাদের সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ব। শিশুদের জন্য সব কাজই ঝুঁকিপূর্ণ।