জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির হৃদয়ভাঙা শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। যিনি তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বাঙালির মুক্তি ও স্বাধিকারের জন্য তাঁকেই সপরিবারে জীবন দিতে হয়েছিল এই রাতে। সেনাবাহিনীর একটি দলছুট অংশ এই হামলা চালালেও তার পেছনে ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের গভীর ষড়যন্ত্র। ইতিহাস ক্রমে তা স্পষ্ট করছে।
সদ্য স্বাধীন দেশ। চারদিকে ধ্বংস্তুপ। শুধুই পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংসতার ছাপ। রাষ্ট্রীয় কোষাগার শূন্য। ছিল না দক্ষ প্রশাসন। এরই মধ্যে পাকিস্তানি কারাগারের ফাঁসির মঞ্চ থেকে রক্ষা পেয়ে বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। শুরু করেছেন দেশ গঠনের নয়া সংগ্রাম। মাত্র সাড়ে তিন বছরে পাহাড়সম বাধা অতিক্রম করে দেশকে তিনি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে থাকেন। ঠিক তখনই হায়েনারা রাতের অন্ধকারে এই হত্যাকা- চালায়। দলছুট কিছু সেনাসদস্যকে কাজে লাগালেও পেছনে ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের নীলনকশা। ব্রিটশ সাংবাদিক মাসকারেনহাসসহ অনেকেই তুলে ধরেছেন সেদিনের সেই ষড়যন্ত্রের জানা-অজানা অনেক কথা। ঘটনা ঘটানোর আগে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে ঘাতক রশিদ বৈঠক করেছিল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। অনেক কিছুই এখন স্পষ্ট। স্পষ্ট হয় পরবর্তী ঘটনামালা থেকেও। ঘাতকদের পুরস্কৃত করা হয় বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রদূত বানিয়ে, ইনডেমনিটি আইনের মাধ্যমে খুনিদের বিচার রোধের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করা, একাত্তরের ঘাতক আব্দুল আলিমসহ রাজাকার-আলবদরদের মন্ত্রী করা, গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার এমনি অনেক ঘটনা প্রমাণ করে পঁচাত্তরের পরিবর্তন কারা করেছে, কেন করেছে, কারা এতে উপকৃত হয়েছে এবং কোন আদর্শকে আবার এখানে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে। এখনো যাঁরা পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের হোতাদের আড়াল করার চেষ্টা করেন, নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বোনেন, তাঁরাও সেই একই পথের পথিক।
১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি আইন নামের কলঙ্কিত আইনটি বাতিল করে। এর পরই শুরু হয় প্রচলিত আইনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার। সে বিচারের রায় হয়েছে, রায় আংশিকভাবে কার্যকরও হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকজন খুনির মৃত্যুদন্ড হয়েছে। কিছু খুনি বিদেশে পালিয়ে আছে। তাদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার মাধ্যমে জাতিকে সম্পূণরুপে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। একইভাবে জেলখানায় চার নেতার হত্যাকারীদেরও বিচারের রায় কার্যকর করতে হবে।
জাতীয় শোক দিবস পালন তখনই অর্থবহ হবে, যখন আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রামকে উপলব্ধি করব, তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার কাজে আন্তরিকভাবে তৎপর হব। পাশাপাশি এখনো যারা স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে, তাদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে ও সমুচিত জবাব দিতে হবে।