বার্তা ডেস্ক: নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে গুলি চালানোর ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডে উদযাপনের সময় একের পর এক বোমা হামলা চালানো হয়। শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে মঙ্গলবার এক অধিবেশনে দেশের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজেবর্ধনে এ মন্তব্য করেন।
এদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এই হামলার পেছনে আইএসের হাত থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, চলতি সপ্তাহের শেষে আরো হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী ওয়াজেবর্ধনে বলেন, তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ক্রাইস্টচার্চে হামলার প্রতিশোধ নিতেই শ্রীলঙ্কায় এ হামলা চালানো হয়।
হামলার ঘটনার আগে একটি গোয়েন্দা সংস্থার স্মারকে বলা হয়, সন্ত্রাসী দলের একজন সদস্য তার সামাজিক যোগাযোগের অ্যাকাউন্টে চরমপন্থি বিষয়ক বিভিন্ন লেখা পোস্ট করতে শুরু করেছিলেন। সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, এ ধরনের গভীর ও জটিল হামলা চালাতে যে সরঞ্জাম লাগে, এর প্রস্তুতিতে কয়েক মাস সময় দরকার। এর মধ্যে আত্মঘাতী সদস্য জোগাড় করা ও বিস্ফোরকদ্রব্য পরীক্ষার মতো বিষয়ও রয়েছে।
রুয়ান উইজেওয়ারদানা বলেছেন, তদন্তে দেখা গেছে ক্রাইস্টচার্চে মুসলিমদের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে রোববারের হামলা হয়েছে। তবে তার এই দাবির পক্ষে কোনো ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি লঙ্কান এই মন্ত্রী।
আর দেশটির প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা গত পরশু বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কার যে সংগঠনই ওই হামলা চালিয়ে থাকুক, তারা বাইরে থেকে সহযোগিতা পেয়েছে।
এ বিষয়ে তদন্তে আন্তর্জাতিক সহায়তাও চাওয়া হয়েছে শ্রীলঙ্কা সরকারের তরফ থেকে। পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের একটি প্রতিনিধি দল ইতোমধ্যে সেখানে কাজ শুরু করেছে।
গত দুই দিনে সব মিলিয়ে ৪০ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করেছে শ্রীলঙ্কার পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একজন সিরীয় নাগরিককেও গ্রেফতার করা হয়েছে বলে সেনা সূত্রের বরাতে জানিয়েছে রয়টার্স।
গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এ হামলার পর ভারত লাগোয়া দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় সোমবার রাত থেকে জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা আগেই বলেছিলেন, শ্রীলঙ্কায় হামলার ঘটনাগুলোর সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কাজের ধরনের মিল পাচ্ছেন তারা।
তদন্তে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই এবং যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে কলম্বো পৌঁছেছেন বলে খবর দিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
শ্রীলঙ্কার একজন মন্ত্রী বলেছেন, উগ্রপন্থি ইসলামী সংগঠন ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত গির্জা ও কলম্বোর ভারতীয় হাইকমিশনে হামলার পরিকল্পনা করছে বলে সপ্তাহ দুই আগেই সতর্ক করেছিল একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু সেই সতর্কবার্তা প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের মন্ত্রীদের কাছে পৌঁছেনি, কারণ দেশটির বিভিন্ন বাহিনীর সিকিউরিটি ব্রিফিং প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার হাতে যায়, প্রধানমন্ত্রীকে তা দেখানো হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করে বলেছে, শ্রীলঙ্কায় আরও সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি রয়েছে। একই ধরনের সতর্কতা জারি করেছে শ্রীলঙ্কায় বিপুল বিনিয়োগ করা দেশ চীন। এক ভ্রমণ সতর্কতায় চীন সরকার তার নাগরিকদের বলেছে, আপাতত শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে যাওয়া নিরাপদ নাও হতে পারে।
ভারত হামলার বিষয়ে সতর্ক করে
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক করেছিল ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী। ভারত সরকারের এক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, হামলার বিষয়ে শ্রীলঙ্কাকে আগাম সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, হামলার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কাকে ৪ এপ্রিল ও ২০ এপ্রিল দুই দিন সতর্ক করা হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনে কারও নাম উল্লেখ না করে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর এক কর্মকর্তা ও শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তার বাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের পদমর্যাদার শ্রীলঙ্কান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই হামলার পূর্ব সতর্কবার্তা জানায়।
একজন শ্রীলঙ্কান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, প্রথম হামলার ঘণ্টাখানেক আগে একটি সতর্কবার্তা এসেছিল। আবার আরেক কর্মকর্তা জানান, হামলার আগের দিন শনিবার রাতেই সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছিল ভারত।
তবে হামলার দিনই শ্রীলঙ্কার পুলিশপ্রধান পুজুথ জয়াসুন্দরা জানিয়েছিলেন, এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের ১০ দিন আগেই সতর্ক করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো সতর্কবার্তা কাজে আসেনি।
সূত্র: বাংলাদেশের খবর