নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ না পেয়েও তালা ভেঙে অনধিকার প্রবেশ করে বাসিন্দাদের নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে রিপন মিয়া (৪৫) ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন রিপন মিয়া ও তাঁর পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওই ঘর থেকে বের করে দিয়ে দখলমুক্ত করে। ফলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ওপর ক্ষেপেছেন রিপন মিয়া ও তাঁর পরিবার। তাঁকে জোর পূর্বক বের করে দেওয়া হয়েছে দাবি করে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেছেন তিনি।

স্থানীয় ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা ও আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার তক্তারচালা গ্রামের আমজাদ হোসেনের মেয়েকে বিয়ে করে রিপন মিয়া ওই এলাকাতেই থাকতেন। মূলত তিনি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের শাহজাহান মিয়ার ছেলে।
সখীপুর উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের কামালিয়া চালা আশ্রয়ণে স্থানীয় চেরু মিয়ার নামে একটি ঘর বরাদ্দ ছিল। চেরু মিয়া বেশ কয়েকদিন অনুপস্থিত থাকায় ওই ঘরের তালা ভেঙে রিপন ও তাঁর পরিবার অবৈধভাবে বসবাস শুরু করেন। এরপর থেকেই রিপন ও তাঁর পরিবার আশ্রয়ণের অন্যান্য বাসিন্দাদের উপর নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছেন।
ওই আশ্রয়ণের বাসিন্দা আলী আকবর বলেন, “রিপনের কারণে আমরা আশ্রয়ণের বাকি ২০টি পরিবার খুবই অশান্তিতে ছিলাম। সে ঘরের মালিক না হয়েও আরেকজনের ঘর দখলের জন্য তালা ভেঙে ফেলে। সে কাউকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। পরে আমরা সকলে মিলে তাঁর নামে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম। মূলত রিপন একজন ঝগড়াটে মানুষ।”
হাতীবান্ধা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা সাইদা নাজনীন আক্তার বলেন, আমি গত তিনমাস আগে এখানে যোগদান করেছি। যোগদানের পর থেকেই আশ্রয়ণের উপকারভোগীরা রিপনের বিরুদ্ধে আমার কাছে নানা অভিযোগ দিতে থাকেন। রিপন অন্য পরিবার ও তাঁদের শিশুদের নানাভাবে হুমকি দিত। এমনকি আশ্রয়ণের রাস্তা দিয়ে চলাচলেও বাধা দিত।
এ ছাড়া গত ২৭ জুলাই রিপন মিয়ার নামে টাঙ্গাইল সদর থানায় জালিয়াতির মামলা হয়। মামলা নং ৩৮/৩০৩। ইতোমধ্যে তিনি জালিয়াতির মামলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, টাঙ্গাইল কর্তৃক অভিযুক্ত হয়ে জেল হাজতেও ছিলেন।
এ বিষয়ে সখীপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুস সালাম বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি রিপন মিয়ার আদি বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানার পাখিমারা তারাকান্দিতে। তিনি বর্তমানে সখীপুর উপজেলার কামালিয়াচালা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের চেরু মিয়া নামের একজনের ঘরে থাকেন। স্থানীয় লোকজন ও মেম্বার জানান রিপন লোক হিসেবে ভালো নয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আলম বলেন, আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত রিপন মিয়াকে ডেকে এনে ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। প্রকৃতপক্ষেই ঘরের প্রয়োজন থাকলে বিধি মোতাবেক আবেদন করতে বলা হয়। কিন্তু তিনি আবেদনও করেননি ঘরও ছাড়েননি। পরে গত ৩১ আগস্ট স্থানীয় ইউপি সদস্যের উপস্থিতিতেই আশ্রয়ণের ওই ঘরটি দখলমুক্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত আশ্রায়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এবং আশ্রায়ণের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে পরিচালনার লক্ষ্যে তাঁকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
তবে ঘরটি তাঁর নামে নয় স্বীকার করে শুক্রবার বিকেলে মোবাইল ফোনে রিপন মিয়া বলেন, চেরু মিয়ার সঙ্গে কথা বলেই আমি ওই ঘরে বসবাস করছিলাম। আমি কাগজপত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু দীর্ঘ দিনেও ওই ঘর আমার নামে দেওয়া হচ্ছেনা। উল্টো আমাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
–এসবি/ডেস্ক