নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সখীপুরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে প্রায় ৩ একর জমি দখল করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের লাঙুলিয়া গ্রামে ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামসুল আলমসহ তাঁর তিন সহোদরের বিরুদ্ধে জমি দখলের এ অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে জমি দখলের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে একটি টিনের ছাপড়া তুলে তাতে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ওই জমি ও কার্যালয়টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছে শামসুল আলম ও তাঁর ভাই ভাতিজারা। অপরপক্ষের দাবি- মূলত বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙিয়ে স্পর্শকাতর ইস্যু তৈরি করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ফাঁদ পেতে রেখেছে দখলকারীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের লাঙুলিয়া মৌজায় ৫৪৭ দাগে দুই একর ৯৩ শতাংশ জমি লাঙুলিয়া গ্রামের শুকুর মামুদ ১৯৪৯ সালে সাবরেজিস্ট্রিমূলে ক্রয় করেন। শুকুর মামুদ মারা যাওয়ার পর তিনছেলে যথাক্রমে নজরুল ইসলাম (৬৫), বজলুল ইসলাম (৫৫) ও সেলিম আজাদ- এই তিন সহোদর ভোগ দখল করে আসছেন। এদিকে একই গ্রামের তিন সহোদর বীরমুক্তিযোদ্ধা জলিল সিকদার, শামসুল আলম ও আবদুল্লাহেল কাফী তাঁরাও এ জমিটি ক্রয় করেছেন বলে দাবি করেন। গত ১০ বছর ধরে এ জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। গত ২০২০ সালের শেষ দিকে যাদবপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামসুল আলম ভাড়া করা লোকজন নিয়ে ওই জমিতে একটি টিনের ছাপড়া ঘর তুলেন। পরে তাঁরা ওই ঘরে ১নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের একটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেন।
নজরুল ইসলাম জানান, ১৯৪৯ সাল থেকে জমিটি আমাদের দখলে ছিল। সেখানে একটি রাইচ মিল ছিল। চাষাবাদ করা হত। ২০২০ সালে পিকআপ দিয়ে বহিরাগত কয়েকশ লোক এনে সন্ত্রাসী কায়দায় জমিটি দখলে নেয়। রাইচ মিলটি ভেঙে দেয় ও কাটা তারের বেড়া দিয়ে দখলে নেয়। এ সময় বাঁধা দিলে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। আমার নামে চাঁদাবাজি মামলা দিয়েছে। ওই জমি নিয়ে আদালতে মামলা আছে। শুনেছি জমিতে গেলে আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙার মামলা দিবে আমাদের নামে। জমি দখলের জন্য আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড দিয়েছে।
বর্তমানে দখলে থাকা মুক্তিযোদ্ধা জলিল সিকদারের দাবি, ওই জমি তাঁদের তিনভাইয়ের। যাঁরা জমি দাবি করছে তাঁদের জমি অন্য দাগে। দলীয় অফিসের জন্য জমি দান করেছি। দখলের জন্য নয়।
ওই নম্বর ওযার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শামসুল আলম বলেন, তিন শতাংশ জমি আমরা তিনভাই মিলে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের জন্য দান করেছি। স্থানীয় আওয়ামী লীগই ওই ছাপড়া ঘর তুলে দলীয় সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হিসেবে ওই ঘর তোলার দিন আমিও ছিলাম। তাই সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জমি দখল করা হয়নি। আমরা আমাদের জমিই দখল করেছি।
উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোনায়েম হোসেন বলেন, এ সাইনবোর্ড সাঁটানোর সঙ্গে আমরা জড়িত নই। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের নামে জমি লিখে দিয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। এছাড়াও আমরা দলীয় কার্যালয়ের জন্য বিতর্কিত কোনো জমি গ্রহণ করবো না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদার বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। বিতর্কিত জমিতে দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ড থাকলে সেই সাইনবোর্ড সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যাঁরা সাইনবোর্ড দিয়ে জমি দখলের সঙ্গে জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।