নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিনামূল্যে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে কয়েকটি গ্রামের অর্ধশতাধিক হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে কালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জামাল মিয়াকে দীর্ঘ সময় তারই পরিষদের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখে ভুক্তভোগীরা। এর আগে চেয়ারম্যানের দেওয়া বুধবার (১৫ই মে) সকালে নির্ধারিত সময়ে ভুক্তভোগীরা চেয়ারম্যানের আহবানে তার কাছে যান। ভুক্তভোগীরা বিদেশ না যেতে পারার কারণসহ সমুদয় অর্থ আর পাসপোর্ট ফেরত চান চেয়ারম্যান জামাল মিয়ার কাছে। তাদের কথায় চেয়ারম্যান কর্ণপাত না করে উল্টো এ বিষয়ে তিনি জানে না এমনকি সব কিছু অস্বীকৃতি জানালে ভুক্তভোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, এক পর্যায়ে চিল্লিা—পাল্লা করতে থাকেন। চেয়ারম্যানের ইঙ্গিতে পরিষদের কক্ষ থেকে গ্রাম পুলিশ দিয়ে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালালে ভুক্তভোগীরা কক্ষটি অবরুদ্ধ করে রাখে। এখবর শোনে চেয়ারম্যানপুত্র আলমগীর হোসেন চাঁন ও তার সহযোগীরা ভুক্তভোগীদেরকে পরিষদে চেয়ারম্যানের কক্ষে আটক করে মারধরের শিকার হন ভুক্তভোগীরা। বুধবার (১৫ মে) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ৬ নম্বর কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল মিয়া গত ৮—৯ মাস আগে বিনামূল্যে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে একই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অর্ধশতাধিক দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে পাসপোর্ট নেন। তারা জানান, শুরুতে বিনামূল্যে বিদেশ পাঠানোর কথা বললেও পরবর্তীতে বিভিন্ন খরচের নামে কচুয়া গ্রামের লালমিয়া ও কালামের থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আমজাদের থেকে ১ লাখ, আড়াইপাড়া গ্রামের মেহেদির কাছ থেকে ১ লাখ, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের লতিফ মিয়ার কাছ থেকে ১ লাখ, আড়াইপাড়া গ্রামের রুবেল মিয়ার কাছ থেকে ৭৫ হাজার, কচুয়া গ্রামের সাকিবের থেকে ১লাখ টাকা এবং সাড়াসিয় গ্রামের জুয়েল, রিপন, হিলিম ও অন্যান্য গ্রামের রায়হান, শুভ, আলীম, শামীম, কাদের এবং সুমনসহ অনেকেরই কাছ থেকে বিদেশ পাঠানোর নামে বিভিন্ন অংকের টাকা নেয়া হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, টাকা দেয়ার পরে ৮—৯ মাস অতিবাহিত হলেও বিদেশ যেতে না পারলে তারা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন তাদেরই ভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ঢাকায় নিয়ে মেডিকেল করা এবং টাকা নেয়ার সময় ইমেইল মেসেজ দেখানো এসবই ছিল চেয়ারম্যানের প্রতারণার অংশ।
পরে ভুক্তভোগীরা চেয়ারম্যানের কাছে টাকা ফেরত দাবি করলে তিনি ১৫ মের মধ্যে বিদেশ পাঠাতে না পারলে টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দেন। ভুক্তভোগীদের বিদেশ পাঠাতে না পারলে চেয়ারম্যানের দেয়া নির্ধারিত সময়ে ভুক্তভোগীরা কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদে টাকা চাইতে গেলে চেয়ারম্যান জামাল মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন চাঁন ও তার সহযোগীরা ভুক্তভোগীদেরকে পরিষদে চেয়ারম্যানের কক্ষে আটক করে মারধর করেন বলে ভুক্তভোগীদের কয়েকজন অভিযোগ করেন।
পরে এ খবর জানাজানি হলে ভুক্তভোগী ও স্থানীয় কয়েক’শ লোক কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কক্ষে চেয়ারম্যান জামাল মিয়া ও তার ছেলেকে দীর্ঘ সময় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে সখীপুর থানার এসআই মান্নান, এসআই জাহাঙ্গীর ও সঙ্গীয় পুলিশ সদস্যরা গিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে। পুলিশ ভোক্তভোগীদের কয়েকদফায় বুঝানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তাতে ফলপ্রসূ না হলে পরে চেয়ারম্যান জামাল মিয়া ও তার ছেলে আলমগীর হোসেন চাঁন আগামী ২২ মে ভুক্তভোগীদের টাকা এবং পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বভাবিক হয় এবং ভুক্তভোগীরা বাড়ি চলে যায়।
উল্লেখ্য, গত ২ মে কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল মিয়ার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুনীর্তির অভিযোগ এনে ওই পরিষদের ১০জন ইউপি সদস্য অনাস্থা প্রদান করেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মবর্তা নিয়ন্তা বর্মনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিয়ন্তা বর্মন বলেন, এ বিষয়ে যেহেতু তদন্ত চলছে তাই মন্তব্য করা যাবে না।