
সাইফুল ইসলাম সানি: সখীপুর উপজেলায় পোঁকা মাকড়ের ক্ষতি থেকে ফসল রক্ষার্থে কৃষকরা পার্চিং (গাছের ডাল পোতা) পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে এনে কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদনে এ পদ্ধতি কৃষকের কাছে দিনদিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠছে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের দিয়ে ইরি-বোরো ক্ষেতে ডালপালা পুঁতার কার্যক্রমকে জনপ্রিয় করতে নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করছেন। কৃষকদের সরল ভাষায়- ‘এ পদ্ধতি গ্রহণে কোনো খরচ নেই। অথচ খুব উপকারী পদ্ধতি। তাই ক্ষেতে বিভিন্ন গাছের ডাল পুঁতে রেখেছি।’
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ক্ষতিকারক পোঁকার আক্রমণ থেকে ইরি-বোরো ক্ষেত রক্ষায় এ পদ্ধতি একটি কৃষি বান্ধব প্রযুক্তি। সাধারণত ‘লাইভ পার্চিং’ ও ‘ডেথ পার্চিং’ নামের দুই ধরনের পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। কৃষকরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম খরচে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে ফসলের অধিক ফলন পেতে পারেন। একর প্রতি ১০ থেকে ১২ টি বাঁশের কঞ্চি অথবা গাছের ডাল পুঁতে রাখতে হয়। ওই ডালে ফিঙ্গে, শালিক, দোয়েলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি বসে ক্ষতিকর পোঁকা মাকড় খেয়ে ফেলে। অতি সহজ এ পদ্ধতি কৃষক খুব সানন্দে গ্রহণ করছেন।
স্থানীয় কৃষি অফিস আরো জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানক্ষেতে ক্ষতিকর ঘাঁসফড়িং, পাতা মোড়ানো পোঁকা, চুঙ্গি ও মাজরা পোঁকার আক্রমণ দেখা দেয়। তাই এ সকল পোঁকার আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় বর্তমানে উপজেলায় প্রায় ৬০ ভাগ কৃষক পাচিং ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছেন। কৃষি বিভাগ এ মৌসুমে সখীপুরের কৃষকদের মধ্যে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের কৃষক আলম মিয়া বলেন, কৃষি অফিসের স্যারেরা আমাগো ধানক্ষেতে খুঁটি পুঁইতা রাখতে কইছে। এতে পখ-পাখালি (বিভিন্ন প্রজাতির পাখি) বইসা পোঁকা মাকড় খাবো। কোনো খরচ নাই; তাই এ বছর ক্ষেতে গাছের ডাল পুঁইতা রাখছি। গজারিয়া গ্রামের কৃষক হুমায়ুন সরকার জানান, বাড়ির গাছ থেকে ডাল কেটে ক্ষেতে পুঁতে দিয়েছি। ওই ডালে বসা পাখিরাই ক্ষেতের ক্ষতিকারক পোঁকা খেয়ে ফেলছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফায়জুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে উৎসব করে কৃষকদের নিয়ে ক্ষেতে ডালপালা পুঁতার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি নিজেও এ কার্যক্রমের তদারকি করছেন বলে জানান। উপজেলার প্রায় সকল কৃষকদের পার্চিং পদ্ধতির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।