নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুরে জীবিত পিতাকে ১৪ বছর আগে মৃত দেখিয়ে সকল সম্পত্তি নিজের নামে করে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে একমাত্র ছেলে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে। উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের ইন্দারজানী ইন্নছ নগরে ঘটেছে এ ঘটনা। অথচ সাইফুলের বাবা মো. দানেছ আলী এখনও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর বয়স এখন ৯২ বছর। তবে ছেলের কারসাজিতে নির্বাচন কমিশনের তথ্য ভান্ডারে দানেছ আলী মৃত। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সাইফুলের চার বোন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে উপজেলাজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

লিখিত অভিযোগ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ইন্দারজনী গ্রামের দানেছ আলী সাত কন্যা ও এক ছেলের জনক। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী দানেছ আলীর বর্তমান বয়স ৯২ বছর। কিন্তু ২০১৯ সালের ২৫ মে ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় ভুল তথ্য দিয়ে একমাত্র ছেলে সাইফুল তাঁর বাবা দানেছ আলীকে মৃত দেখান। নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০১০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দানেছ আলী মারা গেছেন।কাগজে-কলমে মৃত হওয়ায় নতুন বিএস রেকর্ডে দানেছ আলীর সমস্ত জমি চলে যায় একমাত্র ছেলে সাইফুলের নামে।
এদিকে জীবিত দানেছ আলী হজ্ব করতে ২০১১ সালে ৪৯ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। সম্প্রতি ওই জমি খারিজ করতে গেলে ভূমি কার্যালয় জানায়, সব সম্পত্তি সাইফুলের নামে। দানেছ আলী মারা গেছেন ২০১০ সালে। উল্টো জমির ক্রেতারা প্রশ্নের সম্মুখীন হোন- মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে কীভাবে জমি কিনলেন? এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। কারণ প্রকৃতপক্ষে দানেছ আলী এখনও জীবিত রয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোটার তালিকা থেকে বাবার নাম কর্তনের বিষয়টি আমি জানিনা। কেউ হয়তো শত্রুতাবশত আমার নাম ব্যবহার করে আবেদন করেছে। আমার বাবা দানেছ আলী এখনও জীবিত রয়েছেন। নতুন রেকর্ডে বাবার জমি কীভাবে আপনার নামে গেল? এ প্রশ্নের জবাবে সাইফুল বলেন, ভুলবশত আমার নাম ওঠে থাকলে তা সংশোধন করা হবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্দারজানী গ্রামের হাজী আজহার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিউটি আক্তার বলেন, তথ্য সংগ্রহের সময় দানেছ আলীর ছেলে সাইফুল আমাকে তাঁর বাবার মৃত্যুসনদ দেখিয়েছেন। সাইফুল নিজেই বলেছেন তাঁর বাবা ২০১০ সালে মারা গেছেন। ছেলের দেওয়া তথ্য ও মৃত্যুসনদ অনুযায়ী আমি নির্বাচন অফিসে তথ্য জমা দিয়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। এখন নিজের ছেলে যদি মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া কাগজ দেখায় তাহলে আমার কি করার আছে!
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের তালিকায় দানেছ আলী মৃত। এরপরও বিষয়টি নিয়ে যেহেতু কথা উঠেছে, তাই আবেদন প্রক্রিয়াটি যথাযথ নিয়ম মেনে হয়েছিল কি-না বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটওয়ারী বলেন, অভিযোগপত্রটি এখনও হাতে পায়নি, পেলে অবশ্যই এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।