ইসমাইল হোসেনঃ

‘টুকটাক কৃষি কাজ করে চলছে পরিবার নিয়ে অভাবের সংসার। বেশি বাইরে যাওয়া হয়না বাবা ও ছেলের। এদিক ওদিক গেলে বাচ্চারা দেখে ভয় পায়। ভূত বা দৈত্য বলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।’
তাদের যেনো ভোগান্তির শেষ নেই। শেষ হচ্ছেনা রোগ মুক্তিও। অজ্ঞাত বা বিরল রোগে মুখ বিকৃত হওয়ায় তারা খেতে পারেন না স্বাভাবিকভাবে। চোখে দেখতেও অসুবিধা। এরকই এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বিল্লাল হোসেন (৫৫) ও তার ছেলে মাসুদ রানা (২০)। বিরল রোগে আক্রান্ত বাবা-ছেলের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপুর গ্রামে।
সরেজমিন বিরল রোগে আক্রান্ত বিল্লাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিল্লালের ডান চোখের ব্রু থেকে মুখমন্ডল ও গালজুড়ে পুরো অংশ ছেপে গেছে বড় আকারের টিউমারের মত হয়ে। বাম চোখেও এরকম হওয়ার পথে। কপাল, মুখ, গলদেশসহ শরীরে বিভিন্ন অংশে অসংখ্য টিউমার জাতীয় গুটি রয়েছে। কোনোমতে চোখে দেখতে পান তিনি। বিল্লাল পেশায় একজন কৃষক।
মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক কন্যাসন্তান নিয়ে তার পরিবার। তার বড় ছেলে মাসুদ রানারও জন্ম থেকেই তার মতো এ রোগটি হয়েছে। ছেলের বাম চোখের ওপরে টিউমার জাতীয় এ রোগটিও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় হচ্ছে। একই ভাবে ছেলেরও চোখের ব্রু থেকে মুখের গালজুড়ে ছেপে থাকায় চোখে কম দেখছেন এবং শরীরে বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট টিউমারের মত গুটি রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বাবা-ছেলে। অনেক আগে নিজে ময়মনসিংহে আর ছেলেকে ঢাকায় ডাক্তার দেখালেও কি রোগ হয়েছে এ বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি। নিয়তি ভেবেই দিনাতিপাত চলছে বাবা-ছেলের।
কৃষক বিল্লাল হোসেন জানান, জন্ম থেকেই তার এ রোগ। প্রথমে এটি ছোট ছোট মসুর দানার মতো লক্ষণ দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় হতে থাকে। আগুন বা রোদের তাপ বাপ-বেটা কেউ সহ্য করতে পারেনা। মাথা ও মুখ ভারী ভারী লাগে। কষ্টের কারণে মাঝে মধ্যেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।
তিনি আরও বলেন, আমার মতই আমার ছেলেকে কেনো এমন কঠিন রোগে ভুগতে হচ্ছে; ওর ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে গেলো। এ রোগের কারণে লেখা পড়া করতে পারলনা। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে আর সে স্কুলে গেলোনা। স্কুলে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খেলা-ধুলা করতে পারেনা; মুখ দেখতে বিশ্রী এসব কিছুতে মাসুদকে ভাবিয়ে তুলতো। আর এসব কারণে তার পড়ালেখা ভালো লাগেনি।
বিল্লালের স্ত্রী মাহফুজা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী ও পুত্রের চোখে-মুখের এ রোগের বিস্তার দিনদিন ভয়ংকর হওয়ায় পর্যায়গুলো আমি শুধুই দেখছি; কিন্তু ‘অর্থাভাবে সু-চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত তারা।
বিল্লালের বৃদ্ধা মা সুরুত জান বেগম বলেন, ‘তাদের পূর্ব পুরুষের বংশে এ ধরণের রোগের লক্ষণ ছিলনা। তার ছেলে বিল্লালের জন্মকালে চোখের ব্রু’র ওপরে একটু ফুলা ও একটি কালো জনম দাগ দেখা যায়। নাতিরও একই অবস্থা। তিনি ছেলে ও নাতির উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার জন্য দাবি জানান।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘একেতো অভাবের সংসার বিল্লালের। তার ওপর যে ধরণের রোগে ভুগছেন বাবা-ছেলে; এটি দেখলে বুঝা যায় কষ্টের জীবন কেমন। নিজেদের দেহটা আর অভাবের সংসার যেনো কিছুতেই টানতে পারছেন না তারা। সরকারের সহায়তা ছাড়া তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়।’
এ বিষয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী বিরল রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করা পিতা বিল্লাল হোসেন ও পুত্র মাসুদ রানার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
