- সাইফুল ইসলাম সানি, সখীপুর: ‘কাজটা আমার ভাইয়ে করছে, আমার ছেলে করে নাই। হোন্ডা (মোটরসাইকেল) নিয়ে তিনজন আসছিল। আমার ভাইয়ে পিছনে, আমার ছেলে হোন্ডা চালাচ্ছিল। হঠাৎ কইরা কয় হোন্ডা থামা। আমার ছেলে হোন্ডা থামাতে থামাতে দেখে- আমার ভাইয়ে আমার চাচার (হোন্ডার মাঝখানে বসা ছিল) গলায় গামছা পেছিয়ে টান দিয়া নিচে নামিয়ে ফালাইছে। আমার ছেলে কইলো- আমিতো দেইখ্যা অবাক! পরে আমার ছেলেরে কইলো- তুই হোন্ডা নিয়া চইল্যা যা। পরে সে চলে আসে।’
সখীপুরে ভাতিজা রফিক (৩০) ও নাতি পনি কাজী (১৮) কর্তৃক আলোচিত মোহাম্মদ আলী শিকদার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা ও লাশের ঠিকানা দিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যের মুঠোফোনে এমন নির্মম স্বীকারোক্তি দিয়েছেন রফিকের সহোদর বোন ও পনি কাজীর মা আছিয়া বেগম। নিজের ছেলে ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তিমূলক ফোন রেকর্ডটি এখন প্রায় সকলের মুঠোফোনেই পাওয়া যাচ্ছে। আজ শুক্রবার ওই ফোন রেকর্ডটি সখীপুর বার্তার এ প্রতিবেদকের কাছে পৌঁছলে উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হামিদুল হকের সঙ্গে যোযাযোগ করা হয়। তিনি ফোনালাপের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘একটা মানুষকে খুন করার এমন নির্মম ঘটনার বর্ণনা রেকর্ড করা ছাড়া আমার উপায় ছিলনা। আমার কাছে স্বীকার করার পরই আমি পুলিশকে অবহিত করি। পরে ওই ঠিকানায় গিয়ে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়।’
এদিকে মোহাম্মদ আলীর চিহ্নিত খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে গতকাল শুক্রবার মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোশারফ শিকদার ও হাসান শিকদার সখীপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে বড় ছেলে হাসান শিকদার অভিযোগ করেন, ‘আমার বাবা মির্জাপুর থানার পাঁচগাও গ্রামের ফুঁফির বাড়ি থেকে নিখোঁজের কথা শুনেই সখীপুর থানা পুলিশ আমাকে মির্জাপুর থানায় অভিযোগ করার পরামর্শ দেন। নিখোঁজের পরের দিন মির্জাপুর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এ সময় নিহত মোহাম্মদ আলীর মেয়ে রোকেয়া বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘মির্জাপুর থানা পুলিশের গাফিলতির কারণেই আমার বাবাকে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি। গত ২০ এপ্র বৃহস্পতিবার বাবা নিখোঁজের পর শুক্রবার মির্জাপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। গত শনিবার এলাকাবাসী খুনি রফিকের স্ত্রী তারিন ও তারিনের মাকে ধরে মির্জাপুর থানার বাঁশতৈল পুলিশ ফাড়িতে সোপর্দ করলেও রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’ এ ঘটনায় মির্জাপুর থানার ওসি মাঈন উদ্দিনের প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা। উল্লেখ্য, গত ২০ এপ্রিলিল বিকেলে সখীপুর উপজেলার হতেয়া কাজিপাড়া গ্রাম থেকে সার ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী শিকদারকে পারিবারিক জমি নিয়ে বিরোধ মিমাংসার কথা বলে তাঁর সহোদর বড় ভাই জমির শিকদারের ছেলে রফিকুল (৩০) ও নাতি পনির হোসেন (২০) মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। পাঁচদিন পর গত মঙ্গলবার সকালে সখীপুর উপজেলার হতেয়া গ্রামের হলুদিয়াচালা এলাকা থেকে তাঁর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাকছুদুল আলম বলেন, ‘মির্জাপুর থানা প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সখীপুর থানায় পাঠালে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে খুনের মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছ।’