নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার দাড়িপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূরুল ইসলামের (৫৫) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ বাড়ির রান্নাঘর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। শিক্ষক নূরুল ইসলাম উপজেলার দারিপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি কৈয়াদী গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট দাড়িপাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী দাড়িপাকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপিও দেয়। এরপর থেকেই ওই শিক্ষক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। জেলা শিক্ষা কার্যালয় ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের একটি তদন্ত শেষ করেছে। ওই তদন্তের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে বিষয়টি নিয়ে দ্বিতীয়বার তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। আজ মঙ্গলবার ছিল দ্বিতীয় তদন্তের প্রথম দিন। এ কারণে নূরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলেও আজ উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল।
শিক্ষক নূরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা বলেন,”গতকালকেও স্থানীয় মোস্তফা কামাল আমার স্বামীকে হুমকি দিয়েছে এবং এক লাখ টাকা চেয়েছে। কিন্তু আমরা টাকা দেইনি। টাকা না দিলে কামাল বলেছে আমার স্বামীর চাকরি খেয়ে দেবে।”
ওই শিক্ষকের মেয়ে নিপা (২৫) বলেন,‘স্থানীয় মোস্তফা কামাল ও ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে স্থানীয় খাইরুল, হামিদুলসহ কয়েকজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা আমার বাবার কাছে টাকা চাইছে, নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিতাছে। প্রাইমারির ছাত্রীরা মানববন্ধন করতে না চাওয়ায় তারা হাইস্কুলের ছাত্রী এনে পরিকল্পিতভাবে আমার বাবার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করাইছে। এসব মিথ্যা অপবাদ ও হুমকি-ধমকির কারণেই বাবা আত্মহত্যা করেছেন।’
এ বিষয়ে স্থানীয় মোস্তফা কামাল ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নূরুল ইসলামের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। আমি এসব কেন করাতে যাব? কেউ যদি আমার নাম উল্লেখ করে থাকে, তবে তা হবে আমার বিরুদ্ধে অযথা ষড়যন্ত্র।’
এ বিষয়ে স্থানীয় খাইরুল ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,”আমাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গুলো আনা হয়েছে, তা সত্য নয়।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মোরাদ হোসেন খান বলেন, ‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। আজ (মঙ্গলবার) দ্বিতীয়বার তদন্তের জন্য তাঁর বিদ্যালয়ে থাকার কথা ছিল। কিন্তু সকালেই খবর পেলাম তিনি মারা গেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।