- ইসমাইল হোসেন : সখীপুরে ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব বিদ্যালয়ে প্রায় চার হাজারের ওপরে কোমলমতি শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে ক্লাস করছেন। অন্যদিকে ভবনগুলো জরাজীর্ণ থাকায় সামান্য ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলেই বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়। আকাশ মেঘলা দেখা গেলে শিশু শিক্ষার্থীরা দৌঁড়ে বাড়ি চলে যায়। শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার ফলে ওইসব বিদ্যালয় অনুমতি ছাড়াই ছুটি হয়ে যায়। ফলে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে সরেজমিন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওইসব বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- ঘেচুয়া, বগাপ্রতিমা, বেতুয়া, কৈয়ামধু, নিশ্চিন্তপুর, লাঙ্গুলিয়া, হতেয়া, ছোটমৌশা, ইছাদিঘীর পাড়, চতলবাইদ ভাতকুড়াচালা হাজী হাতেম আলী, বহেড়াতৈল, গজারিয়া, কালমেঘা উত্তরপাড়া, রাজাবাড়ি, ভূয়াইদ ভাতগড়া, হাজী আজাহার আলী ও দক্ষিণ ঘোনার চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উপজেলার নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত। ৩০ হাত লম্বা একটি পুরনো জরাজীর্ণ টিনের ঘর। আরেকটি ১৫ হাত লম্বা টিনের তৈরি অফিস কক্ষ। ওই ৩০ হাত লম্বা ঘরই শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, টিনের চালায় মরিচা ধরে ফুটো হয়ে গেছে ওই ফুটো দিয়ে সূর্যের আলো শ্রেণিকক্ষে এসে পড়ে। দরজা-জানালা ভাঙা। কোথাও মেঝে ফেটে গেছে আবার দেবে গেছে। প্রধান শিক্ষক লাইলি আক্তার বললেন, শুনেছি বিদ্যালয়ের টিনের ঘরটি কমপক্ষে ৬০ বছরের পুরনো। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, বৃষ্টি এলে শ্রেণি কক্ষে পানি পড়ে। তাই বৃষ্টি শুরু হলে বই ভিজে যাওয়ার ভয়ে আমরা বাড়ি চলে যাই। ইছাদিঘীরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দুটি ভবন। একটি পাকা অন্যটি পাকা টিনসেট। পাকা টিনসেটটি জরাজীর্ণ, পাঠদানের অনুপযোগী। আরেকটি ভবনে তিনটি কক্ষ। জরাজীর্ণ টিনসেট ভবনের এক পাশের দেয়াল ভেঙে গেছে। প্রধান শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, বিদ্যালয়টি দুই সিফটে চলে। প্রতি সিফটে কমপক্ষে তিনটি শ্রেণিকক্ষ দরকার। আছে মাত্র দুটি। তাই বাধ্য হয়ে পরিত্যক্ত ওই ভবনের একটি কক্ষেই ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করাতে হচ্ছে। উপজেলার ইন্দারজানি গ্রামের হাজী আজাহার আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তিনকক্ষের ভবনটির ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে রড বের হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর উদ্যোগে সাময়িকভাবে ক্লাস চালানোর জন্য একটি টিনের ছাপড়া দেওয়া হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান জানান, ছাপড়া ঘরে বেড়া না থাকায় বৃষ্টি হলে ক্লাস বন্ধ থাকে। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক দুলাল হোসেন জানান, পরিত্যক্ত ভবনে এখন ক্লাস না হলেও শিক্ষার্থীরা ভবনের ভেতর খেলাধুলা করে। ভয়ে থাকি-ছাদ ধসে কখন কী দুর্ঘটনা ঘটে। সরেজমিন উপজেলার বাকি বিদ্যালয়গুলোর চিত্র একই ধরনের বলে জানা গেছে। গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরজাহান আক্তার বলেন, বর্ষা মৌসুমে ভবনের ছাদ চুয়ে শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে। তাই বৃষ্টি এলে শিক্ষার্থীরা অফিস কক্ষে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে বিদ্যালয়ের পাশের শিক্ষার্থীরা দৌড়ে বাড়ি চলে যায়। দক্ষিণ ঘোনারচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘বৃষ্টি আইলেই ভয় করে। কারণ যুদি ছাদ ভাইঙ্গা মাথার ওপুর পড়ে!’
সখীপুর উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এস এম নুরুল ইসলাম বলেন, উপজেলার ১৭টি বিদ্যালয় ছাড়াও আরও কমপক্ষে ২০টি স্কুলের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ওনসব বিদ্যালয়গুলোতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই সরকারের উচিৎ জরাজীর্ণ ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নতুন ভবন নির্মাণ করে শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক দূর করা।
এলজিইডির সখীপুর উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ কুদ্দুছ বলেন, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর প্রাক্কলিত ব্যয় তৈরি করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ বিদ্যালয় ভবন চিহ্নিত ও তালিকা প্রস্তুত করে জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।