মামুন হায়দার: সামাজিক বানয়ন হচ্ছে স্থানীয় দরিদ্র জনগণকে উপকারভোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত বনায়ন কার্যক্রম। যার প্রত্যক্ষ সুফলভোগীও উপকারভোগী হয়ে থাকেন। বনায়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা, বনজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা, লভ্যাংশ বণ্টন ও পুনঃবনায়ন সব কাজেই তারা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত থাকে। ভূমিহীন, দরিদ্র, বিধবা ও দুর্দশাগ্রস্ত গ্রামীণ জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করাই সামাজিক বনায়নের প্রধান লক্ষ্য। সামাজিক বনায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের সেল্ফ ডিপেন্ডেন্ট সহায়তা করা এবং তাদের খাদ্য, পশুখাদ্য, জ্বালানী, আসবাবপত্র ও মূলধনের চাহিদা পূরণ করা। নার্সারি সৃজন, প্রান্তিক ও পতিত ভূমিতে বৃক্ষরোপণ করে বনজ সম্পদ সৃষ্টি, মরুময়তারোধ, ক্ষয়িষ্ণু বনাঞ্চল রক্ষা ও উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, নারীর ক্ষমতায়ন ও নেতৃত্ব সৃষ্টি এবং সর্বোপরি কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য নিরসনে সামাজিক বনায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০০৪ কে আরও কার্যকর ও যুগোপযোগী করে সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০১০ প্রনয়ণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও সরকারী বনভূমিতে বনায়নের জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বন বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের আওতায় উডলট বাগান, কৃষি বন বাগান ও স্ট্রীপ বন বাগা সৃজন করা হয়েছে। এ যাবৎ সখীপুর উপজেলায় প্রায় ১৭৮০ হেক্টর ভূমিতে সামাজিক বনায়ন সৃজন করা হয়েছে। সৃজিত বাগানে শতশত উপকারভোগী সম্পৃক্ত আছে।
সখীপুর উপজেলায় তিনটি রেঞ্জের অধীনে ১১ টি বনবিটে ১ হাজার ৭৮০ হেক্টর জমিতে সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে। রেঞ্জগুলো হচ্ছে- বহেড়াতৈল, হতেয়া ও বাঁশৈেতৈল। বনবিট কার্যালয়গুলো হচ্ছে- বহেড়াতৈল রেঞ্জের আওতাধীন কচুয়া, এমএমচালা, ডিবি গজারিয়া, মরিচা ও বহেড়াতৈল সদর। হতেয়া রেঞ্জের অধীনে কালিদাস, কালমেঘা, কড়ইচালা, বাঝাইল ও হতেয়া সদর এবং বাঁশতৈল রেঞ্জের অধীনে নলুয়া বনবিট কার্যালয়। সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ ও বিট কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সামাজিক বনায়নে শত শত উপকারভোগী রয়েছে।
সামাজিক বনায়নে প্রায় ৩৬ প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করা হয়। এদের মধ্যে আকাশমণি,অর্জুন, গর্জন, গামার, বহেড়া, আমলকি, হরিতকি, নিম, শাল, গজারি, আগর, ম্যানজিয়াম, রেইনট্রি, সোনালু, জারুল, শিশু, মেহগণি ও সেগুন উল্লেখযোগ্য। বহেড়াতৈল রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. এরশাদ জানান, এই রেঞ্জের অধীনে ৫টি বিটে ৮৭০ হেক্টর জমিতে সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে। হতেয়া রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. ওয়াদুদুর রহমান জানান, এই রেঞ্জের অধীনে ৫টি বিটে ৭৬০ হেক্টর জমিতে সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে এবং বাঁশতৈল রেঞ্জের অধীনে নলুয়া বিটে ১৫০ হেক্টর জমিতে সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে বলে নলুয়া বনবিট কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন। এসব সৃজিত বাগানে শতশত উপকারভোগী সম্পৃক্ত আছে। কচুয়া বনবিট কর্মকর্তা শাহ আহমেদ জানান, করোনাকালেও নার্সারি করা, সামাজিক বনায়ন রক্ষা করা এবং সামাজিক বনায়নের সকল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে তাদের।


