সাইফুল ইসলাম সানি: সখীপুরে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪টি বাড়িতে চুরি হয়েছে। কোথাও সিঁধ কেটে, টিনের বেড়া কেটে আবার কোথাও পাকা ভবনের জানালার গ্রিল কেটেও চুরির ঘটনা ঘটছে। তবে নিয়মিত এসব চুরির ঘটনায় কেউ থানায় গিয়ে অভিযোগ করেনি। ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে- ‘যা যাওয়ার তা চলে গেছে, সেগুলো আর ফেরত আসবে না।’ এ ছাড়া এসব সিঁধকাটা বেড়াকাটা চুরির ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করবে বলেও মনে করেন না ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের বানিয়ারছিট উত্তর পাড়ার চান মাহমুদ মিয়ার বাড়িতে চুরি হয়। একই রাতে চুরি হয় বানিয়ারছিট কোনাপাড়ার আবুল কালাম মিয়ার বাড়িতেও। চান মাহমুদের বাড়ি থেকে ১৭হাজার টাকা ও নতুন দুইটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন এবং আবুল কালামের বাড়ি থেকে খুচরা দুই থেকে তিন হাজার টাকা নিয়ে যায় চোরোরা। আবুল কালাম বলেন, বাড়িতে চুরি যাওয়ার বিষয়টি কালিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, কিন্তু থানায় জানাই নি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে একই ইউনিয়নের দামিয়াপাড়া গ্রামের আবদুল হাকিম সিকদার, আকবর সিকদার ও শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে চুরি হয়। তিন বাড়িতেই টিনের বেড়া কেটে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই রাতে দুই বাড়ি থেকে কিছু নিতে না পারলেও আবদুল হাকিম শিকদারের দুটি মোবাইল সেট নিয়ে যায়। এরাও কেউ থানায় জানান নি।
এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পাঁচ বাড়িতে চুরি হয়। উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের দামিয়া বটতলীপাড়া এবং বানিয়ারছিট এলাকায় এক রাতেই ওই পাঁচ বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় চোরেরা। এ সময় ঘরে চেতনানাশক স্প্রে করার কথা বলেন ভুক্তভোগীরা। সৌদি আরব প্রবাসী আবদুল আলীম বলেন, চোর আমাদের ঘরের জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে আমার স্ত্রী, চার মেয়ে, ছেলের বউ, শাশুড়ীসহ পরিবারের সবার প্রায় ১০ ভরি স্বর্ণ ও নগদ ৩১ হাজার টাকা নিয়ে গেছে।
দামিয়া বটতলী পাড়ার কৃষক আবদুল আলীম বলেন, ৮ সেপ্টেম্বর সকালে দোকান থেকে বেকারীর কেক এনে পরিবারের সবাই খাই এবং একটু পরে আমাদের রান্না করা খাবারও খাই। খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমিসহ পরিবারের সবাই অচেতন হয়ে পড়ি। এরপর আমাদেরকে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। আমরা হাসপাতালে থাকায় আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বাড়িতে থাকেন। তাঁরা রাত ১২টার পর ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের জানালা দিয়ে চোরেরা চেতনানাশক স্প্রে করে ঘরের দরজার পাশে টিন কেটে ঘরে প্রবেশ করে। পরে তারা পাঁচ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা নিয়ে যায়। একই রাতে পাশের গ্রাম বানিয়ারছিট এলাকার আবদুস সবুর, আলম মিয়া ও আতোয়ার হোসেনের বাড়ি থেকে মোট ৭টি এন্ড্রয়েড মোবাইল ও নগদ কয়েক হাজার টাকা চুরি করে চক্রটি।
এ ছাড়া গত ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে উপজেলার কুতুবপুর চারিবাইদা এলাকায়ও সিঁধ কেটে এক রাতে ৪ বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
দামিয়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক কাজী শফিউল বাশার বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের এলাকায় চুরি বেড়েছে। এলাকার লোকজন বেশ আতঙ্কিত। সারাদিন পরিশ্রম করে রাতে ঠিক মত ঘুমাতে পারছি না।
এ বিষয়ে কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম কামরুল হাসান বলেন, ভুক্তভোগীরা চুরি যাওয়া মালামাল ফিরে না পাওয়ার আশঙ্কায় থানায় যেতে চান না। তবে স্থানীয়ভাবেই আমরা চেকপোস্টের ব্যবস্থা করেছি। থানা পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে সাইদুল হক ভূঁইয়া বলেন, এসব বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। স্থানীয় চেয়ারম্যানের কথায় ওই এলাকায় আমরা রাতের টহল জোরদার করেছি।