মামুন হায়দার: ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ‘বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের প্রামাণ্য দলিল’ স্লোগানে যে সংবাদপত্রটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। হাঁটি হাঁটি পা পা করে তা পঞ্চমবর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার প্রিয় কাগজ ‘সাপ্তাহিক সখীপুর বার্তা’ পঞ্চমবর্ষে পদার্পণ করবে। ভার্চুয়াল যুগে একটি উপজেলা শহর থেকে সাপ্তাহিক প্রিন্ট পত্রিকা পাঠকদের ভালোবাসা ছাড়া এতদূর আসা সম্ভব ছিলোনা। তাই পাঠকরাই আমাদের মূল চালিকা শক্তি।
পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে পত্রিকাটি এবার উপজেলার পাঁচ ব্যক্তি ও দুইটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা পদক দিতে যাচ্ছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যার যার অবস্থান থেকে সমাজে অসামান্য অবদান রেখেছেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ১০ টায় সখীপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মাননা পদক তুলে দেওয়া হবে।
এবার সখীপুর বার্তা পদক পাচ্ছে- সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আবাহন’। সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখায় ‘আবাহন’কে এ সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে বহু গুণী সঙ্গীত শিল্পীর সৃষ্টি হয়েছে সংগঠনটির কর্ণধার প্রফেসর আলীম মাহমুদের হাত ধরে।
অন্যদিকে ‘সমাজসেবায়’ বিশেষ অবদান রাখায় এবার পদক পাচ্ছে সখীপুরের আরেক সংগঠন ‘ডিঅমস্’এসোসিয়েশন। ১৯৮৯ সালে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সংগঠনটি সমাজ কল্যাণে নানাভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে। বিশেষ করে স্বেচ্ছায় রক্তদান সংগঠনটির অন্যতম সেবামূলক কার্যক্রম।
এদিকে ব্যক্তি পর্যায়ে এবার পাঁচজন গুণী ব্যক্তিকে ‘সখীপুর বার্তা’ পদক দেওয়া হচ্ছে। এঁদের মধ্যে ‘সফল বাবা’ হিসেবে পদক পাচ্ছেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান হাবীবুর রহমান। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। গুণী এই শিক্ষকের বাড়ি উপজেলার কচুয়া গ্রামে। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বাদল। দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বাদল ২৪তম বিসিএস ক্যাডার। এছাড়াও তিনি ২৪তম বিসিএস ক্যাডার এসোসিয়েশন সংগঠনেরও সভাপতি। কর্মক্ষেত্রে তিনি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল -এর একান্ত সচিবের (উপ-সচিব) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কনিষ্ঠপুত্র দেওয়ান মাতলুবুর রহমান। তিনি ২৭তম বিসিএস ক্যাডার। বর্তমানে ঢাকা জেলা আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন।
নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা পদক পাচ্ছেন- সখীপুরের একমাত্র ‘নারী মুক্তিযোদ্ধা’ ফাতেমা খাতুন। তাঁর বাড়ি উপজেলার বহেড়াতৈল গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে তাঁর বিশেষ ভূমিকা। গোলা-বারুদ পাহারা দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না-বান্না, ক্যাম্পে ক্যাম্পে খবর পৌছানো ছিল তাঁর অন্যতম কাজ। সে সময়ে নারীদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া ছিল খুবই চ্যালেঞ্জিং। কিশোরী হলে তো যুদ্ধে অংশ নেওয়া ছিল আরও কঠিন। মুক্তিযুদ্ধে বাদ পড়ার আশঙ্কায় নারী মুক্তিযোদ্ধা ফাতেমা খাতুনের ছিল বিশেষ কৌশল। চুল খাটো করে ছেলেদের মত চুল রেখে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
‘নারী শিক্ষায়’ বিশেষ অবদান রাখায় সম্মাননা পদক পাচ্ছেন- বেগম সুফিয়া আখতার (মরণোত্তর)। তিনি সখীপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষিকা। সখীপুরে তাঁর হাত ধরেই নারী শিক্ষার অগ্রগতি শুরু হয়। পড়াশোনা শেষ করে তিনি মাত্র কয়েকজন ছাত্রী নিয়ে গড়ে তোলেন নারী শিক্ষার এ বিদ্যাপীঠ।
অন্যদিকে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখায় ‘গুণী শিক্ষক’ সম্মাননা পদক পাচ্ছেন- উপজেলার কালিয়াপাড়া ঘোনারচালা গ্রামের শিক্ষক আবুল হাশেম মিয়া। তিনি পার্শ্ববর্তী কালিহাতী উপজেলার একটি দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি একজন শ্রবণপ্রতিবন্ধী। শ্রবণপ্রতিবন্ধী হয়েও শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন।
এছাড়াও ‘প্রেরণাদায়ী মা’ হিসেবে এবার সম্মাননা পদক পাচ্ছেন- সাবিনা ইয়াসমিন নামের এক মা। সাবিনা ইয়াসমিনের বাড়ি উপজেলার প্রতিমাবংকী গ্রামে। তাঁর একমাত্র ছেলে বাংলাদেশী ইংলিশ ক্রিকেটার হাফিজুল ইসলাম রুবেল। স্বপ্নবাজ এ ক্রিকেটার বর্তমানে ইংল্যান্ডের চেস্টার ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ইংল্যান্ড জাতীয় দলের স্পিন বোলিং কোচ পাকিস্তানী ক্রিকেটার সাকলাইন মুশতাকের কাছে স্পিন বোলিংয়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। খুব শিগ্রই তিনি ইংল্যান্ডের জাতীয় ক্রিকেট দলেও জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। তাঁর এই স্বপ্নের পেছনে অনুপ্রেরণা যুগাচ্ছেন মা সাবিনা ইয়াসমিন।

-এসবি/সানি