সাইফুল ইসলাম সানি: অবশেষে ঢাকা-সখীপুর-সাগরদীঘি সড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। শনিবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল চারটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঢাকা-সখীপুর-সাগরদীঘি সড়কের সখীপুর পৌরসভার খাদ্য গুদাম এলাকার ব্যবসায়ীরা সড়কটি অবরোধ করে রেখেছে। দুপুর দুইটার দিকে অবরোধস্থলে গিয়ে দেখা যায়- জনগুরুত্বপূর্ণ অথচ যানবাহনহীন শুনশান নীরব সড়কটির কয়েক জায়গায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। দুই জায়গায় স্টিলের পাইপ দিয়ে বেড়িগেট দেয়া হয়েছে। কিন্তু সড়কের দুইপাশে কোনো যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়নি! কারণ ওই সড়কে সচারাচর এখন গাড়িই চলেনা। গাড়ি চলে বিকল্প সড়কে; সৌখিনমোড়-জেলখানামোড় হয়ে উপজেলা সড়কে। তাই শনিবার ব্যবসায়ীদের অবরোধ দেখে অনেকেই হেসে হেসে বলছেন- ‘অবরোধ করেও কোনো লাভ নাই।’
ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গত প্রায় একবছর ধরে সখীপুর-সাগরদীঘি সড়কের মোখতার ফোয়ারা চত্বর থেকে খাদ্য গুদাম পর্যন্ত সড়কটুকুর বেহাল অবস্থা। এ নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সবক’টি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এরপরও সড়কের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ঘটেনি। ঠিকাদার বলছেন- কর্তৃপক্ষের অবহেলা, আর কর্তৃপক্ষ (স্থানীয় এলজিইডি) বলছেন- প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজিব আহমেদ বলেন, বৃষ্টি হলে এ সড়কে যানবাহনতো দূরের কথা মানুষজন হেটেও চলতে পারেনা। যে কারণে চলতি ঈদের মৌসুমে আমাদের এ সড়কের দুইপাশের ব্যবসায়ীদের বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। কোনো ক্রেতা আসেনা। সবসময় নীরব থাকে।
স্থানীয় এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৪ ঠা মে সখীপুর থেকে গারোবাজার ৩০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আগামী ৫ বছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে ৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকার কাজটি পায় ‘হক ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে ২০ জুন ঠিকাদারের সঙ্গে এলজিইডির চুক্তি হয়। ঠিকাদার টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ও সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বাদল। পানি জমে থাকায় এবং বেশি ভাঙনপ্রবণ হওয়ায় সখীপুর পৌরসভার মোখতার ফোয়ারা থেকে খাদ্য গুদাম পর্যন্ত ১৭০ মিটার, বড়চওনা বাজারে ২৫০ মিটার এবং সাগরদীঘি বাজারের ৭০ মিটার সড়কের আরসিসি ঢালাই করা হবে জানিয়ে ওই সড়কটুকুর বাজেটের টাকা ঠিকাদারের কাছ থেকে কেটে নেয়া হয়। কিন্তু এলজিইডি দীর্ঘদিন পার হয়ে গেলেও সংস্কার কাজ শুরু করতে পারেনি।
এদিকে সড়কে তৈরি হওয়া বড় বড় গর্তে প্রতিদিন বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন আটকে গিয়ে যানজট তৈরি হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। টাঙ্গাইলের সখীপুর, ঘাটাইল, মধুপুর, ময়মনসিংহের ভালুকা এবং ফুলবাড়িয়া উপজেলার একাংশের মানুষকে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে ওই সড়কটি ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া টাঙ্গাইল, বাসাইল, সখীপুর, মির্জাপুর, কালিহাতীসহ কয়েকটি উপজেলার জনগণ ওই সড়ক দিয়ে ময়মনসিংহে যাতায়াত করেন। সড়কের সবটুকু ভালো থাকলেও অল্প একটু অংশের ভাঙনের কারণে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ওই সড়কে যানবাহন চলেনা। তাই অবরোধে জনদুর্ভোগ নেই তাই পুলিশের কাছেও খবর গেছে দেরিতে। জানতে চাইলে সখীপুর থানার ওসি এসএম তুহিন আলী বলেন, দুপুরের পরে খবর পেয়ে আমরা অবরোধকারীদের সরিয়ে দিয়েছি।
উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফাহাদ কদ্দুছ বলেন- সখীপুর-কচুয়া সড়কের ওই অংশটুকু জনবহুল এবং গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সড়কটি পিচ ডালাইয়ের পরিবর্তে আরসিসি ডালাই করা হবে। সেটি প্রসেসিং বিলম্বিত হওয়ায় চলতি বর্ষায় এ জনদূর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।