27.3 C
Dhaka
Sunday, August 24, 2025

সখীপুরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বন বিভাগের জমি বিক্রির অভিযোগ

জাহিদ হাসান: টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়ন...

জুলাই ঘোষণা হতে হবে ঐক্যমতের ভিত্তিতে – আহমেদ আযম খান

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আহমেদ...

সখীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে যুবকের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে জুয়েল রানা (২৫)...

আধুনিক সখীপুর গড়ার অগ্রনায়ক- আলহাজ্ব মুখতার আলী তালুকদার

সখীপুরআধুনিক সখীপুর গড়ার অগ্রনায়ক- আলহাজ্ব মুখতার আলী তালুকদার

আবদুর রাজ্জাক (বিএবিএড):

লেখকের ছবি

পূর্ব টাঙ্গাইলের পাহাড়ী লাল মাটির কৃতি সন্তান, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব জনাব আলহাজ্ব মুখতার আলী তালুকদার ১৯২৫ খ্রীস্টাব্দে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত বাসাইল থানার গজারিয়া ইউনিয়নস্থ গড়গোবিন্দপুর হাজীপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার নাম আলহাজ্ব জোনাব আলী তালুকদার। স্বীয় পিতা ও জ্ঞাতি-গোষ্ঠী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত গড়গোবিন্দপুর হাজীবাড়ী অবৈতনিক পাঠশালায় শুরু হয় তাঁর  শিক্ষার হাতেখড়ি। প্রাইমারী শিক্ষা  সমাপ্ত করে তিনি ভর্তি হন বাটাজোড় বিএম হাইস্কুলে। জুনিয়র পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের পর আর এগুতে পারেননি। জড়িয়ে পড়েন সাংসারিক  ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে। সে-ই থেকে শুরু; সমাপ্তি ঘটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্ব মুহূর্তে। বাল্যকাল থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত সারাটি জীবন তিনি জনগণের খেদমত করে গেছেন নিরলস ভাবে। এমন নিঃস্বার্থ, মানব দরদী সমাজ সেবক সমগ্র পাহাড়ের বুকে আর কেউ আছেন কিনা সন্দেহ। যাঁদের অনবদ্য অবদানে আজকের তিলোত্তমা সখীপুর, তাঁদের প্রায় সবাই আজ পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। দু’চার জন যাঁরা জীবিত আছেন; তাঁরাও বয়সের ভারে কিংবা বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির আক্রমনে বিপর্যস্ত অকেজো প্রায়। যাঁদের কথা বলছি, তাঁদের মধ্যে আলহাজ্ব মুখতার আলী তালুকদার ছিলেন সকলের মধ্য মণি। তাঁর নেতৃত্বেই সর্ব প্রকার কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হতো তৎকালে।

বিগত ১৯৫৬ সনে আলহাজ্ব মুখতার আলী তালুকদার সর্বপ্রথম গজারিয়া ইউনিয়ন কাউন্সিলের মেম্বার নির্বাচিত হন। একজন  প্রভাবশালী মেম্বার হিসেবে তিনি এলাকার রাস্তা -ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও হাট-বাজার সমূহের প্রভূত উন্নতি সাধন করেন। কর্মদক্ষতার পুরস্কার স্বরূপ তিনি পূনরায় মেম্বার পদে নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সনে ‘মৌলিক গণতন্ত্রের আওতায়  নির্বাচিত বি, ডি মেম্বারদের আস্থা ভোটে তিনি  গজারিয়া ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তারপর পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমল মিলিয়ে প্রায় ১৫ বছর তিনি চেয়ারম্যান  হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন  বাসাইল ও সখীপুর থানা উন্নয়ন কমিটির  সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।  বিচক্ষণতা ও কর্ম দক্ষতাহেতু তিনি তৎকালীন  বাসাইল থানার সর্বত্র পরিচিত ও সমাদৃত ছিলেন।
পঞ্চাশের দশক হতে সখীপুরে থানা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করা ছিল তৎকালীন সমগ্র পাহাড়বাসীর প্রাণের দাবী। এ প্রেক্ষিতে বর্তমান তিলোত্তমা সখীপুরের স্বপ্ন দ্রষ্টা শ ম আলী আসগর বিগত ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে “দি হিলি ইউনাইটেড এসোসিয়েশ” নামক একটি সংগঠন  প্রতিষ্ঠা করেন। জনাব মুখতার আলী তালুকদার ছিলেন উক্ত সংগঠনের অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য। ষাটের দশকে এই সংগঠনটি “সখীপুর  থানা দাবী কমিটি “তে রূপান্তরিত হয়। তখন  গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিবাহিনীর খাদ্য-বস্ত্র -আবাসন সহ সর্ব প্রকার সহায়তা দান করেন। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে গড়ার কাজে  তিনি  সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭৬ সনে সখীপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর  তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য আরো বেড়ে যায়। গজারিয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসে সর্বপ্রথম থানার  কার্যক্রম শুরু হয়। তিনি নিজের বাড়ী থেকে  চেয়ার-টেবিল এনে বসার ব্যবস্থা করেন। সার্কেল অফিসার নিয়োগের পর তিনি নিজ দায়িত্বে সকল  কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি অফিসারগণকে নিজের বাড়ীতে রান্না করা ভাত-তরকারি ভাইক দিয়ে ভারিয়ে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে খাওয়াতেন। সরকারী বাসভবন  নির্মাণের পূর্ব পর্যন্ত সার্কেল অফিসার তাঁর  সখীপুর বাজারস্থ বাসায় অবস্থান করেছেন।আলহাজ্ব মুখতার আলী তালুকদার ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষানুরাগী, বিশিষ্ট দানবীর, সমাজ সেবক, পরোপকারী, গরীবের বন্ধু, ধর্মানুরাগী, অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্ত একজন  অমায়িক ভদ্রলোক। নিঃস্ব-দরিদ্র-অসহায়  মানুষের সেবায় তিনি ছিলেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো।
তাঁর অনবদ্য প্রচেষ্টার ফসল পঞ্চাশের দশকে প্রতিষ্ঠিত সখীপুর পি এম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সহ সূর্য তরুণ শিক্ষাঙ্গন, সখীপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, সরকারী মুজিব কলেজ, সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ, গড়গোবিন্দপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা, সখীপুর এতিমখানা তথা  আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জমি দান করে গেছেন। সখীপুর পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও সখীপুর আবাসিক মহিলা কলেজ  তাঁর দানকৃত জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। ষাটের দশকে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পাহাড়ী এলাকায় সর্ব প্রথম “সখীপুর চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি “স্থাপিত হয়। বর্তমানে উক্ত ডিসপেনসারিটি ‘সখীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র’ হিসেবে চালু আছে। তিনি মুক্তি যুদ্ধের স্মৃতি সৌধ নির্মাণ কল্পে প্রায় এক একর এবং গ্রামীণ চর্চাকেন্দ্রের জন্য দেড় একর জমি দান করেছেন। সখীপুরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত  তালতলা চত্বরে প্রায় দুই কোটি টাকা সমমূল্যের জমি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জন্য বিনামূল্যে দান করে গেছেন। অজপাড়াগাঁ সখীপুুুরে কোনো  আবাসন ব্যবস্থা ছিল না, তখন প্রায় ১৫/২০ জন ছাত্র -শিক্ষক তাঁর বাড়ীতে জায়গীর থাকতো।তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা কিন্তু চাট্টিখানি  কথা ছিল না। অথচ তিনি সহাস্য বদনে তা’ সম্পাদন করেছেন। তিনি আজীবন জনগণের  সাথে ছিলেন, জনগণ ও তাঁর সাথে ছিল। তারই পুরস্কার তাঁর পুত্র-পৌত্র-দৌহিত্র তথা বংশ পরম্পরায় ভোগ করে চলেছেন। তিনি শুধু পিতৃপুরুষের মুখ উজ্জ্বলকারী নিজ নামে ধন্য একজন বরেণ্য ব্যক্তি বিশেষ ছিলেননা; তিনি  একজন সার্থক পিতা এবং সার্থক দাদা-নানাও বটে। তাঁর সুযোগ্য সূর্য সন্তান আধুনিক সখীপুর গড়ার নিঁখুত রূপকার প্রয়াত কৃষিবিদ শওকত মোমেন শাহজাহান ছিলেন টাঙ্গাইল-৮ (বাসাইল-সখীপুর) এর চার ৪ বারের নির্বাচিত সফল সংসদ সদস্য। শুধু তাই নয়, শওকত মোমেন শাহজাহান ছিলেন সখীপুর-বাসাইল তথা পূর্ব টাঙ্গাইলের  আপামর জনসাধারণের নয়নমণি। আলহাজ্ব  মুখতার আলী তালুকদারের আদরের নাতি (শওকত মোমেন শাহজাহান এর একমাত্র ছেলে)  অনুপম শাহজাহান জয় একজন আলোড়ন  সৃষ্টিকারী সাবেক সংসদ সদস্য ও একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তাঁর আরেক ছেলে খ্যাতনামা ক্রীড়াবিদ জুলফিকার হায়দার কামাল লেবু বর্তমানে সখীপুর উপজেলা পরিষদের স্বনামধন্য  চেয়ারম্যান। তাঁর দৌহিত্র গোলাম ফেরদৌস ২ নম্বর বহেড়াতৈল ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত  চেয়ারম্যান হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর আরেক দৌহিত্র সুলতান শরীফ পান্না কয়েক মেয়াদে ‘বি আর ডি বি’ সখীপুর এর চেয়ারম্যান ছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে মুখতার আলী তালুকদার একজন  ধর্মভীরু পরহেজগার পাঞ্জেগানা নামাজী মুসুল্লি- মোত্তাকি শ্রেণির মানুষ ছিলেন। সখীপুর থানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজীবন তিনি তাবলীগ জামাতের আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্ব গুণে গুণান্বিত ক্ষণজন্মা মহানুভব মহা মনিষী মুখতার আলী তালুকদার বিগত ২০০৮ সালের ২৮শে আগষ্ট এ নশ্বর জগৎ থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেন। দীর্ঘ কর্মময় জীবন যুদ্ধের তিনি একজন সফল সেনানায়ক। তাঁর অমূল্য অবদান চিরস্মরণীয়; দিবালোকের মতো চিরভাস্বর। তাঁর অমর কীর্তি চির অম্লান। তাই তিনি সকলের ভক্তি ভাজন ব্যক্তিত্ব।
আজ তাঁর এক যুগ পূর্তি তিরোধান দিবস। আমি সর্বান্তকরণে এই মহৎপ্রাণ শ্রদ্ধা ভাজন ব্যক্তির প্রতি অকুণ্ঠ ভক্তি-অর্ঘ্য নিবেদন করে তাঁর বিদেহী  আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সাথে সমগ্র সখীপুরবাসীকে তাঁর অমূল্য অবদান শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করার আহবান জানিয়ে ইতি টানছি।
-লেখক: সাবেক সিনিয়র শিক্ষক, সখীপুর পি এম পাইলট মডেল গভঃ স্কুল এন্ড কলেজ, সখীপুর, টাঙ্গাইল।
-এসবি/সানি

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles