26.3 C
Dhaka
Wednesday, October 8, 2025

সখীপুরে ৮ মাসে ২৪০ জনকে সর্প দংশন, হাসপাতালে নেই অ্যান্টিভেনম

সাইফুল ইসলাম সানি: টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৮ মাসে...

সখীপুরে প্রবাসীর বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপা‌টের ঘটনায় থানায় অ‌ভি‌যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুরে ইতালী প্রবাসীর বাড়িঘর...

এ যেন সত্যিকারের আসমানী

জাহিদ হাসান: আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে...

শীতের পিঠা-পুলি আর খেজুর রসের আত্মীয়তা

অন্যান্যকৃষিশীতের পিঠা-পুলি আর খেজুর রসের আত্মীয়তা

সাইফুল ইসলাম সানি: হেমন্তের শিশির পড়তে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলে সন্ধ্যার পরপরই কনকনে শীতের আবহ; শীতকাল আসন্ন। শীতের সকাল মানেই খেজুর রস, ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা, রসের পায়েসসহ আরও কত বাহারি সব পিঠাপুলির আয়োজন! যেগুলো তৈরি করা হয় খেজুরের রস কিংবা পাটালি গুড় দিয়ে। এ ছাড়া গ্রামে শীত মানেই খোলা চিতুই, দুধ চিতুই, রস চিতুই, দুধপুলি, তেলে ভাজা পিঠা, কলার পিঠা, মুড়ির মোয়া, খইয়ের মুড়কিসহ প্রতিদিন নানা আয়োজন। এসব প্রতিটি আয়োজনের সঙ্গেই খেজুর গুড় ও রসের গভীর এক আত্মীয়তা। খেজুর রস বা খেজুর গুড় ছাড়া এসব পিঠা তৈরি চলেই না।

উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রামের আবদুর রশীদ বলেন, প্রতি বছর শীতেই মেয়ে, মেয়ের জামাই, নাতি-পুতিদের পিঠাপুলির দাওয়াত খাওয়াতে হয়। বছরের ওই এক-দুইটা দিন বাড়িতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। পরিবারের সবাই সাধ্যমত একত্রিত হয়। সবার কলকাকলিতে বাড়িটা ভরে উঠে। খরচ করেও শান্তি পাই। মূল আয়োজনই থাকে খেজুর রস-গু‌ড় আর দুধের পিঠাকে (রস আর দুধের মিশ্রণে ভেজানো চিতুই পিঠা) কেন্দ্র করে।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে অধিকাংশ বাড়ির আঙ্গিনায় খেজুর গাছ রয়েছে। রাস্তার পাশে ও বাড়ির আঙ্গিনায় অনেকটা অনাদরেই বেড়ে ওঠা খেজুর গাছগুলো থেকে এবার রস সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এবার রাজশাহী থেকে বেশ কয়েকটি দল এসেছে সখীপুরে। তাঁরা খেজুর রস সংগ্রহের উদ্দেশে বাসা ভাড়া নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে গাছের কাণ্ড পরিষ্কার ও কাঠি বা নলি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে গাছ থেকে রস সংগ্রহের পর্ব। গ্রামে সকালের
শিশিরের সঙ্গে মৃদু শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গে খেজুর রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা। তবে গ্রামের মানুষের সচেতনতার অভাব ও নির্বিচারে খেজুর গাছ নিধন করায় দিনদিন পরিবেশ বান্ধব এ খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ প্রস্তুত করছেন গাছি আবদুস ছালাম। বুধবার উপজেলার প্রতিমা বংকী গ্রাম থেকে তোলা ছবি।

রাজশাহী থেকে আসা গাছি আবদুস ছালাম জানান, আমরা পেশাগত কারণে এখানে এসেছি। চাহিদা মত খেজুর গাছ না পাওয়ার কারণে দলের সদস্য অনেকেই হতাশ। যে রস পাওয়া যাচ্ছে এতে আশানুরূপ গুড় তৈরি করতে পরবো কিনা এ নিয়ে অনেকের হতাশা রয়েছে। তারপরও এ বছর প্রায় ১৫০টির মতো গাছ পেয়েছি। এরমধ্যে প্রতিদিন ৬০-৭০টি গাছ থেকে রস পাওয়া যাবে। আশা করছি পূর্ণ মৌসুমে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে গুড় পাওয়া যাবে।
তিনি আরও বলেন, শীত একটু বেশি পড়লে পিঠাপুলির উৎসবে খেজুর গুড়ের দাম ও
চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। তাই খেজুর রস ও গুড়ের দামও বাড়বে বলে আশা করছি। যে পরিমাণ শ্রম দিতে হয় সেই অনুযায়ী লাভ করতে পারি না। তবুও পেশাগত কারণে এই কাজ করছি।

প্রতিমা বংকী গ্রামের আনোয়ার হোসেন স্মৃতিচারণ করে বলেন, এক সময় ভোর বেলায় এক টাকা গ্লাস কাঁচা রস ও জ্বাল দেওয়া খেজুর রস ১০ থেকে ১৫টাকা কেজি দরে কিনে খেতাম। এখন বাজারে যে খেজুর রস ও গুড় পাওয়া যায় এতে সেই স্বাদই পাওয়া যায় না। আসল রসের রঙ ও স্বাদ মধুর মতো লাগতো।

উপজেলার মৌশা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মতিউর রহমান বলেন, আগের মতো খেজুরগাছ এখন আর চোখে পড়েনা। শুধু রাস্তার পাশে কিংবা জমির আইলে কিছু খেজুরগাছ এখনো রয়ে গেছে। গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় খেজুর রস সংগ্রহের ঐতিহ্য অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশুদ্ধ রস ও গুড় পেতে অবশ্যই খেজুর গাছের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

এ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান বলেন, অধিকাংশ অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। অন্তত আসল রস ও গুড়ের জন্যে হলেও এসব গাছ রক্ষা করা প্রয়োজন। খেজুর গাছ রক্ষায় স্থানীয়দের আরও সচেতন হতে হবে।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles