নিজস্ব প্রতিনিধি: সখীপুর উপজেলার দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবার এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারেনি। ফলে ওই দু’টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফল পাসের হার শুন্য। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো কালিয়াপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং ইছাদিঘী দাখিল মাদরাসা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দু’টিকে ফল বিপর্যয়ের কারণ ব্যাখ্যা করতে চিঠি দিয়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ইছাদিঘী দাখিল মাদরাসার মানবিক বিভাগ থেকে ২৬ জন পরীক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু তারা কেউ পাস করতে পারেনি। মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে এবতেদায়ীসহ ১৫ জন শিক্ষক রয়েছে। দাখিল মাদরাসার সুপার আবদুল হাই মিয়া কালের কন্ঠকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২৬ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করলেও ১৯ জন পরীক্ষা দেয়। ৭জন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় এবং শিক্ষক সংকটের কারণে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ফলাফল ভালো ছিল বলেও তিনি দাবি করেন। মেহজাবিন নামের একজন পরীক্ষার্থী বলেন, গণিত ও ইংরেজি পরীক্ষার প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় আমরা ভালো করতে পারিনি। ইত্যাদিগী গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা অভিযোগ করেন মাদরাসাটিতে নিয়মিত পড়াশোনা হয় না। অনেক স্বপ্ন নিয়ে কষ্ট করে আমরা প্রতিষ্ঠানটি করেছি কিন্তু একজনও পাশ করে নাই জেনে আমরা কষ্ট পেলাম। ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি এম এ হাকিম বলেন, বিগত দিনের ফলাফল ভালো কিন্তু হঠাৎ করে এবার এমন বিপর্যয় কেন হল পরিচালনা পরিষদের সভা করে সেটা খতিয়ে দেখবো। যাঁদের গাফিলতি রয়েছে প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
অন্যদিকে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থিত কালিয়াপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনজন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে কেউ পাশ করতে পারেনি। ওই প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকসহ ১১ জন শিক্ষক ও তিনজন কর্মচারী রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৫৬ জন। বিদ্যালয়টি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। ২০২১ সালে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি মেলে। ২০২১সালে ১জন এবং ২০২২ সালে ২জন পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে। কিন্তু ২০২৩ সালে তিনজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়ে কেউ পাস করতে পারেনি। এমন ফলাফলে হতাশ বিদ্যালয়টির শিক্ষক কর্মচারীরা। এমন ফলাফলে এমপিওভুক্তি নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন তাঁরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট করে বেতন ছাড়া চাকরি করছি। বিগত দু’টি পরীক্ষার শতভাগ পাশের ফলাফলে এমপিওভুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলাম। এবারের ফলাফলে আবার চিন্তায় পড়লাম। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন বলেন, বিগত দুই বছর ফলাফল ভালো ছিল, শতভাগ পাস করেছে। এবারের ৩ জন পরীক্ষার্থী খুব দুর্বল থাকায় কেউ কার পাস করতে পারেনি। আগামীতে ১৭ জন পরীক্ষা দেবে নিশ্চয়ই ফলাফল ভালো হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ঝিল্লুর রহমান বলেন, ফল বিপর্যয়ের কারণ ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমপিভুক্ত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফল শুন্য হলে তা খুবই দুঃখজনক। আমরা ভালো ফলাফল না করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। ফল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে শিক্ষাবিদ প্রিন্সিপাল আলীম মাহমুদ বলেন, এমন ফল বিপর্যয় প্রত্যাশিত নয়। সারা বছরই বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের যত্ন সহকারে পড়াশোনা করানো দরকার। শুধু পরীক্ষায় পাস করার জন্য নয় জ্ঞান জন্য জ্ঞানার্জনের জন্য শিক্ষার্থীদে নিয়মিত পড়াশোনা করার দরকার। ফলাফল বিপর্য এড়াতে ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষা অফিসারদের সমন্বয় থাকা জরুরি।
