নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। বছরের পর বছর ধরে এসব সংগঠনের সম্মেলন হয় না। এর মধ্যে যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে কয়েক বছর আগে। ফলে দলীয় কর্মকান্ড চালু থাকলেও উৎসাহ-উদ্দীপনা হারাচ্ছে পদপ্রত্যাশী ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কিন্তু সংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল নেতারা দোষ চাপাচ্ছেন মহামারী করোনা ভাইরাসের ওপর। সম্মেলন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা সবাই বলছেন করোনার কারণে সম্মেলনের আয়োজন সম্ভব হয়নি।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একেকটি কমিটির মেয়াদ তিন বছর। সর্বশেষ সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালে। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে কুতুব উদ্দিন আহমেদকে সভাপতি ও শওকত শিকদারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। হিসেব অনুযায়ী বর্তমান কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে চার বছর আগে।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত শিকদারকে বলেন, টাঙ্গাইলের মধ্যে প্রথম সখীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনও করা হবে।
পৌর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৩ সালে। কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ৫ বছর আগে। ওই সম্মেলনে আহাম্মদ আলী মিঞাকে সভাপতি ও শফিউল ইসলাম কাজী বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম কাজী বাদল বলেন, কয়েকবার তারিখ নির্ধারণ করেও করোনা মহামারী ও লকডাউনের কারণে যথা সময়ে সম্মেলন করা যায়নি। তিনিও দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের আশ্বাস দেন।
এদিকে ২০১৮ সালের শেষের দিকে টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগ তিন মাসের জন্যে সখীপুর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয়। কমিটিতে এমএ ছবুরকে আহ্বায়ক ও আলমাস আজাদকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সজীব আহমেদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও এই আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি।
জানতে চাইলে যুগ্ম আহ্বায়ক সজীব আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। তা ছাড়া করোকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উপজেলা যুবলীগ অনেক সামাজিক কর্মকান্ড করেছে। করোনার কারণে উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।
তিন বছরের জন্য উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা হয় ২০১২ সালে। কামরুল হাসানকে সভাপতি ও শাহআলম সাজুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। এই কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে ছয় বছর আগে। তবে সম্মেলনের সময় পায়নি নেতারা।
বর্তমান সভাপতি কামরুল হাসান বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে ইউনিয়ন ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। করোনার কারণে উপজেলা কমিটির সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি।
২০১৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিনকে সভাপতি ও আবদুল মালেককে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা কৃষক লীগের কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির মেয়াদও শেষ হয়েছে ৫ বছর আগে।
সভাপতি অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন বলেন, ৭টি ইউনিয়নে সম্মেলন করা হয়েছে। বাকী একটি ইউনয়নের সম্মেলন শেষ করেই উপজেলা কমিটির সম্মেলন করা হবে।
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ শরীফুল ইসলামকে সভাপতি ও রাসেল আল-মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছয় সদস্যের উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ মাত্র ৩০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দিলেও দুই বছরেও তা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফুল ইসলাম ওরফে মির্জা শরীফ বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও চারটি ইউনিয়নের কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের অসহযোগিতা ও করোনার পরিস্থিতির কারণে বাকী চারটি ইউনিয়নের সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। সকল স্তরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সমন্বয় করে চারটি ইউনিয়নের কমিটি হওয়ার পর উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে তৎকালীন ছাত্রলীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
এদিকে, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রতিটি সংগঠনের মেয়াদকাল তিন বছর। এর মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার বিধান রয়েছে। প্রতিটি কমিটির মেয়াদ দীর্ঘদিন আগে শেষ হয়ে গেলেও সম্মেলনের আয়োজন হয়নি। ফলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে নেতাকর্মীদের অনেকের মধ্যে আয়েশি মনোভাব চলে এসেছে। বছরের পর বছর একই কমিটি দায়িত্বে থাকায় নতুন নেতৃত্ব উঠে আসছে না। এতে সংগঠনে আভ্যন্তরীণ কোন্দল ডালপালা ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই যথা সময়ে সম্মেলন হওয়া দলের জন্যে ভালো।

