ইসমাইল হোসেনঃ আগামি ১৭ জুলাই টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে চরম হয়রানি ও অনিয়মের পাশাপাশি ঘুষ লেনদেনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে উপজেলা নির্বাচন অফিস। প্রকাশ্যেই নেওয়া হচ্ছে ঘুষ। গত কয়েকদিন ওই অফিস ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউল হক মজনুর নির্দেশে অফিস সহকারী রাব্বীসহ অফিসের কর্মকর্তারা নির্ধারিত মনোনয়ন ফরম পূরণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে ধাপে প্রার্থীদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করছেন।
ফরম পুরণের কথা বলে প্রতি প্রার্থীর কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা করে ঘুষ নিচ্ছেন। সঠিক ভাবে ফরম পূরণ করে দেওয়ার কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে এ ঘুষ।
অভিযোগ রয়েছে এর আগেও উপজেলায় অনুষ্ঠিত কয়েকটি ইউপি নির্বাচনেও ব্যাপক অনিয়ম করেছেন নির্বাচন কর্মকর্তা আতাউল হক মজনু। তিনি ওইসব নির্বাচনেও নানা ধরনের ভয় দেখিয়ে প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন। এছাড়াও ভোটকেন্দ্র দায়িত্ব পালনকারী প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারদের পছন্দমতো কেন্দ্রে নিয়োগের কথা বলে প্রার্থীদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করার অভিযোগও রয়েছে।
অন্যদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র-সংক্রান্ত কাজে গেলেই হতে হয় ভোগান্তির শিকার। এতে দূর-দূরান্তের লোকজন চরম ভোগান্তির শিকার হন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, হারানো বা স্থানান্তরের আবেদন মানেই টাকা। চাহিদামতো টাকা না দিলে হয়রানি হতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে একটি দালাল চক্রের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে জাতীয় পরিচয় পত্রও বানিয়ে দেওয়া হয় এ অফিস থেকে। এ চক্রের অন্যতম হোতা হচ্ছে মোশারফ হোসেন। এই মোশারফ হোসেন নির্বাচন অফিসের একজন দালাল। তিনি প্রতিটি জাতীয় পরিচয় পত্র বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে ৮-১০ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। তিনি নির্বাচন অফিসের কোন কর্মকর্তা কর্মচারী না হলেও প্রতিনিয়ত তাকে ওই অফিসে পাওয়া যাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে এ উপজেলার হাজারও সেবাপ্রত্যাশী। ভূক্তভোগীরা বিষয়টিকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কালিয়া ও হতেয়া রাজাবাড়ি ইউনিয়নের একাধিক মেম্বার প্রার্থী বলেন, মনোনয়ন ফরম সঠিক ভাবে পূরণ করে দিয়েছে। এজন্য ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। অফিসের রাব্বী ভাই আমার কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন। আমরা মনোনয়ন ফরম পূরণে করলে যদি ভুল হয়। এই ভয়ে সঠিকভাবে পূরণ করার জন্যই মুলত টাকা দিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়চওনা ইউনিয়নের একাধিক প্রার্থী বলেন, “ভাই এগুলো জেনে কি করবেন। মনোনয়ন ফরম পূরণ করতে ওরা ৩ হাজার করে টাকা নিচ্ছে। এর থেকে একটি টাকাও কম নিচ্ছেনা। দয়া করে আমাদের নাম পত্রিকায় লেইখেন না। ক্ষতি হতে পারে।
হাতীবান্ধা ইউনিয়নের সংরক্ষিত এক নারী সদস্য প্রার্থী জানান, আমরা কয়েকজন প্রার্থী মিলে একত্রে উনাদের
মনোনয়ন ফরম পূরণের টাকা দিবো। দেখি কত কম দেওয়া যায়।
এদিকে কালিয়া ইউনিয়নের ঘোনারচালা গ্রামের একজন বলেন, আমার ছেলের জন্মনিবন্ধন বের হওয়ার পর আমি নির্বাচন অফিসে যাই আইডি কার্ড বানাতে। পরে সেখানে অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে এসেছি। কোনভাবেই বানাতে পারলাম না। পরে টাকা দিয়ে দালাল মোশারফ মিয়ার মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র বানিয়েছি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন আতাউল হক বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মনোনয়ন ফরম পূরণ করতে কে কাকে টাকা দিয়েছে আমি জানি না। অফিসের কেউ জড়িত থাকলে বিষয়টি দেখা হবে।