নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘মাথার ঘাম পায়ে ফেলে হারভাঙা পরিশ্রম করে পত্রিকার ব্যবসা করেন আমার বাবা। সেখান থেকে যে সামান্য টাকা আয় হয় তা দিয়ে চলে আমাদের সংসার ও দুই ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ। এতে বাবার অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু বাবা সেই কষ্টকে কষ্ট মনে করেননি। সবসময় পড়াশোনা করে বড় ও আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা দাদা মোকছেদ আলী বলতেন, আমরা দেশ দিয়েছি তোমাকে সে দেশের যোগ্য নাগরিক হয়ে মানুষকে সেবা দিতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা দাদা ও দরিদ্র বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই আমি নিয়মিত পড়াশোনা করেছি।’ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সখীপুর উপজেলার পত্রিকার এজেন্ট শাহীনুজ্জামান শাহীনের ছেলে সাব্বির হাসান জয়। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন মেধাবী সাব্বির হাসান জয়। বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষায় সে মেধা তালিকায় (৫৬তম) হয়েছে। ছেলের এমন সাফল্যে শাহীনের পরিবারে এখন খুশির বন্যা বইছে। এর আগে সাব্বির ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজে (১৩৩২ তম), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (১৬৪তম) ও ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি IUTতে (৬৪তম) স্থান অর্জন করে ।
পত্রিকার এজেন্ট শাহীন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাব্বির হাসান জয় প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে। পরে সে সখীপুর বিএএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইসএসসিতেও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।
সাব্বিরের বাবা পত্রিকা এজেন্ট শাহীনুজ্জামান শাহীন বলেন, পত্রিকার ব্যবসা করে সীমিত আয় দিয়ে সংসার এবং দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে আমার অনেক কষ্ট হয়।ছোটবেলা থেকে আমি যে স্বপ্ন দেখেছি ছেলের মাধ্যমে তা ধীরে ধীরে পূরণ হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করার সুযোগ থাকলেও আমার ছেলে তা না করে নিজের মেধায় যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। মূলত বুয়েটে ভর্তি হয়ে সে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের সেবা করতে চায়। ছেলের এমন সাফল্যে আমি খুবই খুশি। সে যেনো দেশের জন্য কিছু করতে পারে। কিন্তু ছেলের এমন ঈর্ষণীয় সাফল্যের মধ্যেও কী করে পড়াশোনার এতো টাকা খরচ যোগাবেন তা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তাঁর।
