সাইফুল ইসলাম সানি: টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৮ মাসে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত) ২৪০ জন সাপে কাটা রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। অর্থাৎ গড়ে প্রতিমাসে সাপের কামড়ে আহত হয়েছেন ৩০ জন। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রেহানা পারভীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যানুযায়ী এদের মধ্যে গত তিনমাসেই মারা গেছেন নিলুফা বেগম (৩০), সাদ্দাম হোসেন (২৩), কাজলী বেগম (৬০), সিয়াম হোসেনসহ (১১) অন্তত ৫ জন। তবে স্থানীয়দের দাবি— মৃত্যুর সংখ্যাটি প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক বেশি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, সখীপুর উপজেলায় সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা পুরো জেলার প্রায় অর্ধেক।

এদিকে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষকে সাপে কাটলেও বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই অ্যান্টিভেনম। প্রতিনিয়ত সাপে কাটা রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। সময়ের সঙ্গে জীবনের বাজি ধরে ছুটে যাচ্ছেন জেলা ও বিভাগীয় শহরে। চলতি বর্ষা মৌসুমে সাপের ভয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন উপজেলাবাসী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমতল পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় টাঙ্গাইলের সখীপুরে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মানুষকে সাপে দংশন করে। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাপের অ্যান্টিভেনম রাখার দাবি করে আসছে স্থানীয়রা। মাস দুয়েক আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়- তাদের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যক সাপের ভ্যাকসিন রয়েছে। এই তথ্যটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সখীপুরসহ আশপাশের উপজেলার সাপে কাটা রোগীরাও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। এতে দ্রুত শেষ হয়ে যায় অ্যান্টিভেনমের মজুদ। গত ১৫ দিন ধরে অ্যান্টিভেনম না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক বুলবুল হাসান জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে আমার ভাগনে রাকিবকে (৩০) সাপে কাটে। সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভ্যাকসিন না পেয়ে আমরা সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাই। সারা রাত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থেকে সকালে ফিরেছি। আল্লাহর রহমতে রোগী সুস্থ হয়েছে।
সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেহেনা পারভীন রুমি সখীপুর বার্তাকে বলেন, গত ৮ মাসে আমাদের হাসপাতালে ২৪০ জন সাপে কাটা রোগী চিকিৎসা নিতে এসেছেন। সখীপুরে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু বর্তমানে অ্যান্টিভেনম মজুদ নেই। আগে ডিজি হেলথ থেকে যে ভ্যাকসিন বরাদ্দ দেওয়া হতো তা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সারা দেশেই একই অবস্থা। সাপে কাটা একজন রোগীকে ১০ ভায়াল ভ্যাকসিন দিতে হয়, যার মূল্য ১৫ হাজার টাকা। এত খরচ দিয়ে হাসপাতালের অর্থায়নে তো ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব নয়। তারপরও বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন অফিস ও কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. ফরাজী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম মঞ্জু বলেন, সরকারিভাবে আমাদের যে অ্যান্টিভেনম বরাদ্দ ছিল এখন সেটা বন্ধ। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন অথবা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে কিছু অ্যান্টিভেনমের ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল রনী বলেন, আমাদের কাছে ভ্যাকসিনের জন্য কোনো বরাদ্দ থাকেনা। এ বিষয়ে গত আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও আলোচনা করা হয়েছে। এরপরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।