নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সুরঞ্জিত সরকার (৪০) ও সঞ্জয় সরকার (৩০) তাঁরা আপন চাচাতো ভাই। তাঁরা সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) পদে চাকরি করছেন। তাঁদের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার ভাতগ্রামে। সখীপুর হাসপাতাল গেটের একই ভবনের দোতলায় সুরঞ্জিত সরকার ও তিনতলায় সঞ্জয় সরকার ভাড়া বাসায় থাকেন। স্ত্রী-সন্তানদের দূরে রেখে তাঁরা করোনাযুদ্ধে নেমেছেন। এখনো কোনো অসুখ-বিসুখেও পড়েননি তাঁরা। তাঁরা এক দিনও ছুটিও নেননি। টানা গত দুই মাস ২৩ দিনে ১২ জন মৃত ব্যক্তিরসহ ৫০৪টি নমুনা সংগ্রহ করেছেন। একটি নমুনাও নষ্ট হয়নি।
নমুনা সংগ্রহে কখনো রোগীর বাড়িতে, আবার কখনো আইসোলেশন সেন্টারে আবার কখনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটছেন তাঁরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বড় ভাই সুরঞ্জিত স্ত্রী ও আট বছরের এক ছেলে রয়েছে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছেন। সেখানে তাঁর বৃদ্ধ মা–বাবা রয়েছেন। আর ছোট ভাই সঞ্জয় সরকার করোনা সংক্রমণের ভয়ে স্ত্রী ও দেড় মাস বয়সী মেয়েকে গাজীপুরে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছেন। ছোট মেয়েটির বয়স এখন চার মাস। প্রায় তিন মাস ধরে মেয়ের মুখ দেখেননি তিনি।
সঞ্জয় সরকারসঞ্জয় কুমার বলেন, ‘৩১ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমরা দুই ভাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। ২ এপ্রিল আইসোলেশনে থাকা একজন পোশাককর্মী, তাঁর স্ত্রী ও একজন ভ্যানচালকের নমুনা সংগ্রহ থেকে কাজ শুরু। টানা ৮৩ দিনে সাড়ে ৫০৪ নমুনা নিয়েছি। করোনা সন্দেহে সন্তানেরা সখীপুরের বনে এক মাকে ফেলে গিয়েছিল। রাত দেড়টায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমাউল হুসনা ম্যাডামের ডাকে ওই এলাকায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করেছিলাম। সারা রাত আর ঘুমাতে পারিনি আমরা। করোনা সংক্রমণের ভয়ে স্ত্রীসহ আমার দেড় মাসের মেয়েকে গাজীপুরের শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছি। কাজের বুয়া না থাকায় বাসায় নিজেই রান্না করে খাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুস সোবহান বলেন, তাঁরা দুই ভাই মিলে টানা রাত-দিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দুই ভাই সত্যিকারেই করোনাযোদ্ধা। দেড় মাসের শিশু বাচ্চাসহ স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ি রেখে, পরিবার–পরিজনকে দূরে রেখে মানুষকে একটানা সেবা দিয়ে দুই ভাই যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, সত্যিই তা প্রশংসার দাবি রাখে।

