27 C
Dhaka
Monday, November 24, 2025

সখীপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে চার প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা

নিজস্ব সংবাদদাতা: সখীপুরে ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে...

সখীপুরে ৮ মাসে ২৪০ জনকে সর্প দংশন, হাসপাতালে নেই অ্যান্টিভেনম

সাইফুল ইসলাম সানি: টাঙ্গাইলের সখীপুরে ৮ মাসে...

সখীপুরে প্রবাসীর বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপা‌টের ঘটনায় থানায় অ‌ভি‌যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুরে ইতালী প্রবাসীর বাড়িঘর...

ব্যর্থ হতে বসেছে সখীপুর খাদ্য বিভাগের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান

জাতীয়ব্যর্থ হতে বসেছে সখীপুর খাদ্য বিভাগের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান

মামুন হায়দার: সখীপুর উপজেলায় ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। খাদ্য বিভাগের দেওয়া টার্গেটের এক শতাংশ ধানও কিনতে পারেনি তারা। চাল সংগ্রহও চলছে ধীর গতিতে। তবে ধানের দাম বেশি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২ হাজার ৬৮৫ মেট্রিক টন। চাল সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রা ১ হাজার ৫০৪ মেট্রিক টন। গত ১৮ মে থেকে ধান ও চাল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ধান ও চাল সংগ্রহের সময়সীমা আগামী ৩১ আগস্ট। গত দুই মাস ১০ দিনে এখানে ধান সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র প্রায় ৩ মেট্রিক টন, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ। সময়সীমা প্রায় শেষ হয়ে আসছে। মাত্র এক মাস সময়ে ওই ধান কীভাবে সংগ্রহ হবে, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর চাল সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রা ১৫০৪ মেট্রিক টনের মধ্যে ২৫ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ৮০ মেট্রিক টন সংগ্রহ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার হিসেবে খুবই নগণ্য।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা আরও জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার সরকারি খাদ্যগুদামে ন্যায্যমূল্যে ধান সংগ্রহে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা ও প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৪০ টাকা। এ দামে উন্মুক্ত লটারিতে বিজয়ী তালিকাভুক্ত ৮৯৫ জন কৃষকের প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ৩ মেট্রিক টন করে ধান বিক্রয় করতে পারবেন। চলতি বছরের ১৮ মে থেকে খাদ্যগুদামে ধান সংগ্রহ শুরু হয় এবং তা চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। অথচ গত দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এ পর্যন্ত উপজেলার খাদ্যগুদামে মাত্র একজন কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ৭০ মণ ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, উপজেলার ৮টি মিলারের সঙ্গে চাল সংগ্রহের চুক্তি হয়েছে। হাসকিং ও অটোমেটিক রাইস মিলের বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, এবার বাজারে ধানের দাম বেশি, ফলে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে গেলে কেজি প্রতি দুই টাকা ক্ষতি হয়। ফলে তারা ইচ্ছে থাকলেও চাল দিতে পারেননি। এ প্রসঙ্গে সথীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত সাথী রাইস মিলের মালিক আবুল কাশেম জানান, তার মিলের নামে ৯৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ। তিনি এক টন চালও দিতে পারেননি। একই কথা বলেছেন ডাবাইল গোহাইলবাড়ি এলাকার আবদুল্লাহ শিকদার অটো রাইস মিলের মালিক আবদুল্লাহ শিকদার। তার মিলের নামে ৬৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ। তিনিও একটন চালও দিতে পারেননি। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছে, খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করতে গেলে কেজি প্রতি দুই টাকা ক্ষতি হয়। ফলে তারা ইচ্ছে থাকলেও চাল দিতে পারেননি। এছাড়াও আরও দুই একটি কারণ থাকলেও সাংবাদিকদের কাছে তারা বলা যাচ্ছে না বলেও জানান।
এ ব্যাপারে সখীপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান একটু স্লো হয়েছে স্বীকার করে বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় এবার কৃষকরা ধান দিতে উৎসাহী না। অন্যদিকে আবহাওয়াগত কারণেও ধান শুকনো সিদ্ধ করে চাল দেওয়া একটু সময় লাগছে।’

তিনি বলেন, ‘৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় আছে, দেখা যাক।’ তবে খাদ্য বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলছেন, এবার ধান চাল সংগ্রহ অভিযান পুরোপুরি সফল না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘খাদ্য সংগ্রহ অভিযান নিয়ে আমরা মহাবিপদে আছি। আমরা হাসকিং ও অটোমেটিক রাইস মিলের মিলারদের চাপ দিচ্ছি। তারা আমাদের সঙ্গে চুক্তি করেছে; নির্দিষ্ট পরিমাণ জামানত আছে।’ ফলে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যেই চাল সংগ্রহ করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তবে ধান সংগ্রহ অভিযান সম্পর্কে কোনও আশার বাণী শোনাতে পারেননি তিনি। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
অভিজ্ঞ মহল জানায়, ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলে যে কোনো দুর্যোগের সময় সরকার বিপদে পড়বে। প্রয়োজনে অধিক দামে চাল কিনে সরকারকে সরবরাহ করতে হবে দুর্যোগকালে।

জুলাই ও আগস্ট বৃষ্টি ও বন্যার মাস। এছাড়া চলতি মাসের শেষে ঈদ। সুতরাং এ এক মাসে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আপদকালীন মজুতের জন্য সরকার প্রতি বছর আমন ও বোরো মৌসুমে স্থানীয় চালকল মালিকদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে চাল সংগ্রহ করেন। করোনার কারণে চলতি বোরো মৌসুমে সরকার এ সংগ্রহ অভিযানকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এ লক্ষ্যে এবার ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অন্যবারের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে। কিন্তু লটারি করতেই অনেক সময় চলে যায়। এর মধ্যে কৃষকের হাত থেকে ধান মজুতদারদের গুদামে চলে গেছে। ফলে সরকার এখন আর ধান পাচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা, আগাম বন্যা ও সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষের আভাস পেয়ে অনেক কৃষক এবার ধান হাত ছাড়া করছে না। যারা মজুতদার তারা ধান কাটা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ধান ক্রয় শুরু করে। মিলারও একই সঙ্গে ধান মজুত করে। ফলে যেসব কৃষক ধান বিক্রি করেছে সেগুলো ইতিমধ্যে মজুতদারদের গুদামে গেছে। মিলারদের সঙ্গে চালের জন্য সরকারের যে চুক্তি হয়েছে সে চুক্তি অনুযায়ী মিলাররাও চাল দিতে পারছে না। কারণ সরকার যেখানে ৩৬ টাকা কেজি চাল ধরেছে সে চাল বাজারে ৩৮-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এখন তারা বলছে বেশি দামে ধান কিনে ৩৬ টাকা কেজিতে চাল সরবরাহ সম্ভব নয়।
উপজেলার সানবান্দা গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, একবার রোদে ধান শুকিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতি মণ ধান ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকা দামে বাড়ি থেকেই বিক্রি করা যায়। কিন্তু খাদ্যগুদামে এই ধান বিক্রি করতে হলে তিনবার রোদে শুকাতে হবে। ধানের আর্দ্রতা সঠিক আছে কি না, তা দেখতে নমুনা নিয়ে কয়েকবার গুদামে যাওয়ার ঝামেলা, পরিবহন খরচ এসবের কারণেই এখানকার কৃষকেরা তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছেন না।

উপজেলার গড়গোবিন্দপুর গ্রামের ধান-চাল ব্যবসায়ী মফিজ তালুকদার বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম বেড়েছে। তা ছাড়া বাজারে চালের দামও কিছুটা বেশি। কৃষকেরা ঝামেলার কারণেই গুদামে ধান বিক্রিতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তবে কৃষকেরা হাটেও ধান বিক্রি করছেন না। তাঁরা বাড়িতে ধান মজুত করে রাখছেন। আমন ধান পাওয়ার আগে আগে তাঁরা মজুতকৃত ধান বিক্রি করবেন বলে অনেক কৃষকের কাছ থেকে তিনি শুনেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, করোনাকালের পর খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে। এ কারণে কৃষকেরা সরকারি গুদামে তো দূরের কথা, হাটবাজারেও ধান বিক্রি করছেন না। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ধান মজুত করে রাখছেন। আমন ধান ঘরে আসার সময়ের ঠিক আগে আগে তাঁরা মজুতকৃত ধান বিক্রি করবেন।

এ ছাড়া কৃষকেরা হাটে ধানের ভালো দামও পাচ্ছেন। এতে খাদ্যগুদামে আর্দ্রতা ও ওজন মাপা, পরিবহন খরচ, ব্যাংক চেকে টাকা পাওয়া এসব নানা ঝামেলার কারণে খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে আসতে তাঁরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। এতে সরকারের ধান সংগ্র কার্যক্রমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

সখীপুর উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত ১৮ মে ধান-চাল সংগ্রহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের ঘোনারচালা গ্রামের কৃষক বিল্লাল হোসেনের কাছ থেকে ৭০ মণ ধান কেনা হয়েছিল। গত দুই মাস ১০ দিনে লটারিতে বিজয়ী তালিকাভুক্ত বাকি ৮৯৪ জন কৃষকের আর কেউ ধান বিক্রির কথা নিয়ে আমাদের খাদ্যগুদামে আসেননি। এ অবস্থায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত রয়েছেন।’

উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলম ফাহিম বলেন, ‘হাটবাজারগুলোয় ধানের দাম তুলনামূলক কিছুটা বেশি। পরিবহন খরচ বেশি হওয়া, ১৪ শতাংশ আর্দ্রতা থাকলে ধান নেওয়ার এমন নানা দাপ্তরিক ঝামেলা পোহাতে স্থানীয় কৃষকেরা অভ্যস্ত নন। এসব কারণেই ধান গুদামে নিয়ে আসার জন্য কৃষকেরা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং খাদ্যশস্য সংগ্রহ ও মনিটরিং (তদারকি) কমিটির সভাপতি আসমাউল হুসনা লিজা বলেন, গত দুই মাস ১০ দিনে মাত্র একজন কৃষকের কাছ থেকে মাত্র ৭০ মণ ধান কেনা হয়েছে। এতে বোঝা যায় কৃষকদের গুদামে ধান বিক্রিতে তেমন আগ্রহ নেই। এখনো এক মাস বাকি আছে। প্রয়োজনে লটারি বিজয়ীসহ সব কৃষককে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আর্দ্রতার বিষয়টিও শিথিলতায় আনা যেতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles