30.7 C
Dhaka
Tuesday, July 29, 2025

বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হুমায়রার কবরে বিমানবাহিনীর শ্রদ্ধা

জাহিদ হাসান: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল এন্ড...

সখীপুরে ডিঅমস্ এসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইলের সখীপুরের ঐতিহ্যবাহী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন...

৮ মাস অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত বেতন তুলছেন শিক্ষক দম্পতি

জাহিদ হাসান: টাঙ্গাইলের সখীপুরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক...

সখীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাছতলায় চলছে পাঠদান

সখীপুরকাকড়াজানসখীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাছতলায় চলছে পাঠদান

জাহিদ হাসান:

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের আসমানী কবিতার মতোই যেন টাঙ্গাইলের সখীপুরের সুরীরচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া স্কুলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শিক্ষা গ্রহণ করছে ১২৩ জন শিক্ষার্থী। ভবনটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে, এ যেন হয়ে উঠেছে সত্যিকারের মৃত্যুফাঁদ। একটুখানি বৃষ্টি হলেই পাকা ভবনের ছাদ থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানিতে ভরে যায় শ্রেণীকক্ষ। বই-খাতা ভিজে যায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। ভবনের দেয়াল, পিলার, ছাদ, মেঝে সবখানেই ফাটল। তীব্র গরমে শ্রেণিকক্ষে ফ্যানের ব্যবস্থা থাকলেও, ব্যবহার করা হয় না ছাদ ভেঙে যাওয়ার ভয়ে। পাকা ভবন থাকতেও এ যেন রহিমদ্দির ভেন্না পাতার ছানি।
গত ২০ জুলাই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ছাদের বীম ভেঙ্গে সিমেন্ট এর টুকরা পরে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইলমা ইসলাম আহত হয়। তারপর থেকে ভবনের দরজা বন্ধ, খোলা আকাশকে ছাদ করে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। গাছতলায় বসে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে উপজেলার সুরীরচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষক। বর্ষাকালের সামান্য বৃষ্টিতেই গাছতলাতেও থেমে যায় পাঠদান। নতুন ভবনের অভাবে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে একটি পুরনো পাকা ভবন ও মাত্র ১৪ হাত দৈর্ঘ্যরে একটি টিনের ঘর আছে। বিদ্যালয়টি ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও পাকা ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৯৩-৯৪ অর্থ বছরে। ওই ভবনটিতে একটি অফিস রুম ও তিনটি শ্রেণিকক্ষ। কয়েক বছর আগে ৭ লাখ টাকা বরাদ্ধ পেয়ে আংশিক সংস্কার করা হয়। অন্যদিকে গ্রামের মানুষের সহায়তায় টিনের ঘরটি নির্মান করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। এখন ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছয়টি শ্রেণীর পাঠদান সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে টিনের ছোট ঘর ও গাছতলাই হয়ে উঠেছে শ্রেণীকক্ষ।
আহত ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইলমা ইসলাম বলেন, ছাদ থেকে সিমেন্টের খন্ড আমার হাতের উপর পড়লে আমি অনেক ব্যাথা পাই। ওই দুর্ঘটনার পর থেকেই গাছতলায় ক্লাস করছি আমরা। একটা নতুন ভবন নির্মান হলে আমরা আনন্দ নিয়ে পড়াশুনা করতে পারতাম।
৫ম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী মিরাজ মিয়া বলেন, গাছতলাতেও আমাদের ক্লাস করতে সমস্যা হচ্ছে। কারন এখানে কোন বোর্ড নেই। বোর্ড ছাড়া তো অংক ক্লাস করাই যায় না। তাছাড়া বৃষ্টি হলেই ক্লাস বন্ধ।
সহকারী শিক্ষক কামরুন নাহার কেয়া বলেন, এত ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করা খুব কঠিন। সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি কখন না জানি আবার ভবন ভেঙ্গে পড়ে মাথার উপর। তবুও আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার মান ঠিক রাখার। গাছতলায় পাঠদান করালে বাচ্চাদের মনোযোগ ধরে রাখা এমন পরিবেশে সম্ভব নয়। শিক্ষার উন্নয়নে দ্রুত নতুন ভবন তৈরি জরুরি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নরুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬জন শিক্ষক ও ১২৩জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র দুটি। বাদ্য হয়ে শিক্ষকরা বাইরে ক্লাস নিচ্ছেন। তবে এখন বর্ষামাস, বৃষ্টি নামলে আর ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয়না। তিনি আরও বলেন, আমরা ইতিমধ্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসে নতুন ভবনের চাহিদা জমা দিয়েছি। দ্রুত ভবন বরাদ্ধ না পেলে শিক্ষা কার্যক্রমে মারাত্মক ক্ষতি হবে।
শিক্ষার্থীদের একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে সারাক্ষণ চিন্তায় থাকি, কখন না জানি আবার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। কয়েকদিন যাবৎ গাছতলায় ক্লাস নিচ্ছে স্কুলের শিক্ষকরা। সেখানেও ঠিকমত ক্লাস করতে পারছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা
উপজেলা শিক্ষা অফিসার খোরশেদ আলম বলেন, বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। টিনের ঘরে একটি শ্রেণিকক্ষ ও ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে পাশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দুটি কক্ষে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। নতুন ভবন বরাদ্ধের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এজিআরডি নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন প্রকল্প নামে একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় এ উপজেলার ৬২টি বিদ্যালয়ের তালিকা করা হয়েছে। আশা করছি ওই প্রকল্পটি পাশ হলে ওই বিদ্যালয়টি নতুন ভবন পাবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল রনী  বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে, ওই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষ ক্লাস নেওয়ার জন্য বরাদ্ধ দিয়েছি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

Check out our other content

Check out other tags:

Most Popular Articles